আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হাত-পা বেঁধে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুর ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিত নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার পৌর সদর বাজারের এক স্বর্ণের দোকানে গত মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ছারোয়ার হোসেন কাওসার (১৪) নামে প্রতিবন্ধী শিশুটি চার দিন ধরে নির্যাতনের দগদগে ক্ষত নিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডের ৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে। এর সাত দিন আগে বিনা বেতনে স্বর্ণের দোকানে কাজ শিখতে এসে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী শিশুর ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনা এখন টক অব দ্য টাউন।
শুক্রবার রাতে সরেজমিন পরিদর্শনকালে হাসপাতাল শয্যায় নির্যাতিত শিশু পাকুন্দিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের টান লক্ষীয়া গ্রামের দরিদ্র শ্রমজীবী ছাইদুল ইসলামের ছেলে কাওসার জানায়, ঘটনার সাত দিন আগে থেকে সে পাকুন্দিয়া পৌর সভার কাউন্সিলর উজ্জ্বল মিয়ার অপূর্ব স্বর্ণ শিল্পালয়ে কাজ শিখতে আসে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিবন্ধী কাওসারকে দোকানে রেখে অপর কর্মচারী মনির হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে যায়। এ সময় উজ্জ্বল মিয়া বাড়ি থেকে দোকানে ফিরে আসেন। দোকানে এসে স্বর্ণের আংটি চুরি করার অপবাদ দিয়ে প্রতিবন্ধী কাউসারকে দোকানের পেছনে নিয়ে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন।
এ সময় কাউন্সিলর উজ্জ্বল, তার ভাই মানিক মিয়া ও বন্ধু জহিরুল ইসলাম মিলে কাউছারের হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে বেধড়ক পেটায়। নির্যাতন করে বাম হাতের কুনুইয়ের নিচের হাড় ভেঙে ফেলে এবং ডান হাতের কনুইয়ের নিচে ব্লেড দিয়ে আঁচড়ে রক্তাক্ত জখম করে। উপরন্তু বৈদ্যুতিক তার কাটার প্লাস দিয়ে কাউছারের ডান পায়ের তলার মাংস কেটে ফেলে এবং গ্যাসের আগুনে বাম পায়ের তলার মাংস পুড়ে দিয়ে ডান কানও কেটে নেয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের দোকানিরা এসে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।
নির্যাতিত প্রতিবন্ধী শিশু কাউছারের বাবা ছাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে দোকান মালিক পৌর কাউন্সিলর উজ্জ্বল মিয়া, তার ভাই মানিক ও হাপানিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামকে আসামি করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পাকুন্দিয়া থানায় একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে দোকানের মালিক পৌর কাউন্সিলর উজ্জ্বল মিয়া দাবি করেন, কাউসার তার দোকান থেকে তিনটি স্বর্ণের আংটি ও চারটি কানের দুল চুরি করে নিয়ে যায়। এসব অলংকারগুলো কোথায় রেখেছে এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মাত্র। তার শরীরে কোনো রকম আঘাত বা নির্যাতন করা হয়নি।
তবে নির্যাতিত শিশুর পরিবারের দাবি, জনপ্রতিনিধির প্রভাব আর অর্থের দাপটের মুখে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে নির্যাতনকারীরা। আর এ জন্যই অভিযোগ দায়েরের পরও মামলা এফআইআর করার ঘটনা ঝুলে আছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. আজহারুল ইসলাম সরকার (পিপিএম) এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি একটি কাগজ পেয়েছেন বটে। তবে অভিযোগকারীকে পরবর্তীতে থানায় আসতে বলা হলেও তিনি আসেননি। অভিযোগকারী এলেই মামলা রুজু করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানালেন ওসি মো. আজহারুল ইসলাম সরকার।
সূত্র : কিশোরগঞ্জে কাউন্সিলরের হাতে প্রতিবন্ধী শিশু নির্যাতনের শিকার [যুগান্তর, ৭ জুলাই ২০১৮]