কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি ।।
দিনের বেলায় রাজমিস্ত্রীর যোগালি আর রাতের বেলায় পড়াশোনা। বাবা আলতু মিয়া মারা গেছেন ছোটবেলায়। ভাঙ্গা ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধা মা। তবুও সবকিছু সামলে নিয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে আচমিতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিশোর রুবেল মিয়া (১৪)।
অষ্টম শ্রেণীতে এই প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া একমাত্র বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী সে। বাবা আলতু মিয়ার চেহারা ঠিক মনে নেই। মাত্র ১ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে রুবেল।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন বৃদ্ধা, অসুস্থ মাকে নিয়ে একটি ভাঙ্গা টিনের দোচালা ঘরে বসবাস তার। বর্তমানে সে আচমিতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত।
সপ্তাহে কয়েকদিন এলাকায় কখনো ২০০ টাকা আবার কখনো ২৩০ টাকা মুজুরিতে রাজমিস্ত্রীর যোগালিয়া হিসেবে কাজ করে রুবেল। সেই টাকা দিয়েই চলে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা, সংসার এবং লেখাপড়ার খরচ।
মা ফিরোজা বেগম বলেন, “ঘরের চালে বড় বড় ছিদ্র। একটু বৃষ্টি হলেই বিছানা আর ওর বইপত্র ভিজে একাকার হয়ে যায়। সেদিনের বৃষ্টিতেও বইগুলো ভিজে গেছে, রোদে শুকিয়ে তা ঘরে রাখছি।”
৩ ভাই আর ৪ বোনের মধ্যে রুবেল মিয়া সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। ভাই ২ জন আগেই বিয়ে করে অলাদা থাকেন। রুবেল থাকেন তার মা’কে নিয়ে।
একদিকে পড়াশোনা অন্য দিকে সংসারের পুরো দায়িত্ব মাথায় নিয়ে অদম্য মেধাবী রুবেলের এভাবে এগিয়ে যাওয়া অনেকটা কষ্টদায়ক হলেও প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই পায়নি রুবেলের পরিবার। লেখাপড়া নিয়ে প্রতি মুহূর্তে শঙ্কায় রয়েছে রুবেল।
আচমিতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সোহরাব উদ্দিন বলেন, “রুবেল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। তার কাছে কোন বেতন নেয়া হয় না। আমরা চেষ্টা করি তাকে সহযোড়িতা করতে। তবে সে যদি শিক্ষার সুযোগ সুবিধা ভালো পেত তবে সে আরও ভাল করত।”