আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।
হাওরের বুকে সারা বছরের আশ্রয় খুঁজেন তারা। হোক তা প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকার সংগ্রাম। শত প্রতিকূলতা মাড়িয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান তারা। বলছিলাম নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত হাওরের বুকে ছয়মাসের আবাসিক এলাকা কাশিপুরের মানুষের কথা।
কাশিপুরবাসী সারা বছর হাওরের বুকে থাকতে চান। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ ও ১৯৮৮ সালের প্রলয়ংকারী বন্যায় গ্রামটি বিলীন হয়ে পড়ে। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে যাযাবর জীবন। বর্ষার পানি আসলেই আর গ্রামে থাকা যায় না। এজন্য বাপ-দাদার ভিটে মাটি ছেড়ে আশ্রয়ের জন্য নতুন করে জায়গা কিনতে হয়েছে। কেউ নিকলী কেউ দামপাড়া আলিয়াপাড়া, দেরুয়াইল, কেউ ইন্দা চুল্লীতে আবাসন গেঁড়েছেন। কিন্তু মাত্র ৪টি মাস অবস্থান করে আবার ফিরে আসতে হয় কাশিপুরে। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে একমাত্র ফসল ঘরে তুলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই আসা-যাওয়া। জীবনের এই ঘানি টানা যেন এক ফেরারি জীবন। এই গ্লানিময় জীবন থেকে তারা বেরিয়ে আসতে চান।
গ্রামের একজন বৃদ্ধ, আবদুল জব্বার। কষ্টের কথাগুলো জানাচ্ছিলেন এই প্রতিবেদককে। তিনি বলেন, “আমরার ফোলাফান মানুষ করতারিনা। কোন রহমে খেতের কাম আর মাছ ধইরা টিক্কা আছি।” আবু বকর নামে আরেকজন গ্রামবাসী বলেন, “গরবারি নিয়া আইতে লাগে বিশ হাজার টেহা, নিয়া যাইতে লাগে বিশ হাজার। এহানে থাইকা যা কামাই করি, যাইতে-আইতে সব শেষ অয়া ফরে। আমরার গেরাম যদি বেরিবাধ অইত, তা অইলে আমরার কষ্ট দূর অইত।” গ্রামটিতে বর্তমানে দুই থেকে তিন হাজার লোক বসবাস করছেন। প্রায় ১৫০ জনের মতো আছে শিশু, যাদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত।
এখানে কোনো স্কুল-মাদ্রাসা না থাকায় ওরা লেখাপড়া করতে পারছে না। নামাজের জন্য একটি মসজিদ আছে। এটি বর্ষাকালে তলিয়ে যায়। মসজিদের সমবেত মুসল্লিরা জানান, আমরা সারা বছর হাওরের বুকেই থাকতে চাই।
এ ব্যাপারে সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, কাশিপুর গ্রামটি পুনঃনির্মাণ করতে সরকারি পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, কাশিপুর গ্রামটির কথা শুনেছি। এটিকে নির্মাণ করা দরকার।