আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।
আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার মাধ্যম হলো ইতিকাফ। ইতিকাফ আরবী শব্দ। বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো অবস্থান করা, আটকে রাখা, নিজেকে বন্দী করা, নির্দিষ্ট সময় বা গণ্ডিতে বাস করা, মসজিদে অবস্থান করা ইত্যাদি। ফকীহ আবুল হোসাইন খুদুরী রাহঃ বলেন, রোজা অবস্থায় ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। ইসলামী শরিয়ায় ৩ প্রকারের এতেকাফ রয়েছে। ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল। মান্নতের জন্য এতেকাফ আদায় করা ওয়াজিব। রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা সুন্নাত। যে কোন সময় এতেকাফ করা নফল।
রাসুল সাঃ প্রতিবছরই রমজান মাসে এতেকাফ করতেন। সহীহ হাদিসসমূহে বর্ণিত আছে, রমজানের শেষ দশকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্য মসজিদে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়া হতো এবং সেখানে রাসুল সাঃ মাদুর বিছিয়ে পর্দা টানানো হতো। অথবা ছোট তাঁবু লাগিয়ে দেয়া হতো। রাসুল সাঃ রমজানের ২০ তারিখে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে তাশরিফ নিতেন। এর পর ঈদের চাঁদ দেখার পর সেখান থেকে বের হতেন। (মা’ আরিফ) এতেকাফকারী নির্জনে বসে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকেন। তাঁর যবান গুনাহ থেকে হেফাজত থাকেন। হাত পা চোখ কান ক্বলব- সব কিছুই নিরাপদে থাকেন। আর এজন্য তাঁর বড় পুরস্কারও রয়েছে।
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল সাঃ বলেন, এতেকাফকারী সকল পাপ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য এতো বেশি নেকী লিখতে হয় যেন স্বয়ং সে সর্ব প্রকার সৎকাজ করছে (মেশকাত শরিফ)। এতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি পবিত্র রমজানে ইতিকাফ করবে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে দুটি পবিত্র হজ্জ ও দুটি পবিত্র উমরা করার সমতুল্য সওয়াব দান করবেন।
আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তার পিছনের গোনাহ মাফ করে দিবেন। হযরত ইবনুল কাইয়্যুম রাহঃ বলেন, ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো রূহ ও অন্তরকে আল্লাহর সাথে মিলানো। এজন্য এতেকাফকারীর কর্তব্য হলো যৌন সম্ভোগ ত্যাগ করা, কম কথা বলা। প্রয়োজন ছাড়া এতেকাফের স্থান ত্যাগ করে না যাওয়া। একজন এতেকাফকারীর উচিত সার্বক্ষণিক আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকা। কোরআন তেলাওয়াত করা। দোয়া নফল নামাজ পড়া। তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। যাতে লাইলাতুল ক্বদর রজনীর সাওয়াব হাসিল করতে পারেন।