বিশেষ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ ।।
অনেক কষ্টে মেয়ে ফাল্গুনী আক্তারকে লেখাপড়া করাচ্ছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবপুর গ্রামের শামসুন্নাহার। এবার তাঁর মেয়ে এসএসসিতে জিপিএ ৩.০৬ পেয়েছেন। বাবা মজিবুর রহমান রিকশাচালক। তিনি গ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন। তাদের স্বপ্ন মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবেন।
সোমবার ২৭ জুন দুপুরে শামছুন্নাহার তার মেয়েকে ভর্তি করাতে শহরের সরকারি মহিলা কলেজে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে কলেজের গেট থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সিট নেই। একথা শুনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ফাল্গুনি। কিছুতেই থামছে না তার কান্না। শুধু ফাল্গুনী নয়, তার মতো আরো দুই শতাধিক ছাত্রী ভর্তির সুযোগ না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন।
এ সময় কলেজ গেটের সামনে ভর্তির দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন। তখন কলেজ গেটে বিশৃঙ্খল পরিবেশ ও হট্টগোল শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশ গিয়ে প্রতিবাদী ছাত্রীদের কলেজগেটের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।
সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে শহরের কালীবাড়ি মোড়ে গিয়ে মানববন্ধন করে তারা। এ সময় ভর্তি দাবি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে সোমা আক্তার নামে এক ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনি জেলার করিমগঞ্জের হাত্রাপাড়া গ্রাম থেকে ভর্তি হতে কলেজে গিয়েছিলেন। সোমবারই ছিল ভর্তির শেষ তারিখ।
ভর্তি-বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ কলেজে অপেক্ষমান তালিকা থেকে যাদের ভর্তি করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে মেধা তালিকা বিবেচনা করা হয়নি। রীতিমতো প্রকাশ্যে ভর্তিবাণিজ্য হয়েছে। বহিরাগত লোকজন ফরম সংগ্রহ করে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে। আর এতে কলেজ কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কলেজ সূত্র জানিয়েছে, সরকারি মহিলা কলেজে সব বিভাগ মিলিয়ে ১৪৫০ সিট আছে। অনলাইনে আবেদন পড়ে ৪০০০টি। ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর দেখা গেছে, মানবিক শাখা থেকে যে ৭০০ জনের মেধা তালিকা করা হয়েছিল, সেখান থেকে ভর্তি হয় ৩১০ জন। বাকিদের অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তি করা হয়। একইভাবে বিজ্ঞান বিভাগে মেধা তালিকার ৪০০ জনের মধ্যে ২২৫ জন নির্ধারিত তারিখে ভর্তি হয়। এক্ষেত্রে শূন্য সিটে অপেক্ষমান তালিকা থেকে পূরণ করা হয়। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
বঞ্চিতদের অভিযোগ, অপেক্ষমান তালিকা থেকে ছাত্রী ভর্তি করতে গিয়েই কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন। এখানে তারা মেধা বিবেচনা করেননি।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান ভর্তি-বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তির বিষয়ে একটি সময়সূচি করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত নোটিশ কলেজে টাঙিয়েও রাখা হয়। ওই সময়সূচি শিক্ষার্থীরা অনুসরণ করেনি। আমরা তো বসে থাকতে পারি না, নির্দিষ্ট সময়ের পর শূন্য সিটগুলো পূরণ করে ফেলেছি। সময়মতো ভর্তির চেষ্টা না করাতেই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে।
তবে তিনি বলেন, যারা এ কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি, তাদের অন্য কলেজে ভর্তির সুযোগ রয়ে গেছে। কারণ আবেদনে প্রত্যেক শিক্ষার্থী পাঁচটি পছন্দের কলেজের কথা উল্লেখ করে থাকে। ওইসব কলেজে সিট খালি থাকলে সেখানে তারা ভর্তি হতে পারবে।
তবে শিক্ষার্থীরা বলছে, ভর্তির কোনো সময়সূচির কথা তাদের কেউ জানায়নি। এ ধরনের কোনো নোটিশও চোখে পড়েনি তাদের।