মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ ।।
অবশেষে দুর্বিসহ শিকলবন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের মানসিক প্রতিবন্ধী ফাতেমা আক্তার। দীর্ঘ তিন বছর পর বসতঘরের অন্ধকার থেকে মুক্ত আকাশ দেখার সুযোগ হল তার। সেই সাথে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে ফাতেমা সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমানের উদ্যোগে সোমবার ১৭ জুলাই দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে নেয়া হয়েছে। সেই সাথে দরিদ্র পরিবারের মানসিক ভারসাম্যহীন ফাতেমার উন্নত চিকিৎসার দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি । সেখানে ফাতেমার সাথে তার বাবা মহিবুর রহমান ও মা আছিয়া খাতুনও আছেন।
এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘ফাতেমার শিকলবন্দি জীবন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর সিভিল সার্জন সংবাদগুলো পড়ে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সোমবার সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে ফাতেমাকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আনেন। পরে কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মবিন উদ্দিনসহ একটি দল ফাতেমার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, ফাতেমা সিজোফ্রেনিয়া রোগে ভুগছে। ফাতেমাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় ও কিশোরগঞ্জে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকদের মতামতের ভিত্তিতে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের মানসিক রোগ ইউনিটে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক প্রফেসর ডা. আব্দুল গণির তত্ত্বাবধানে ফাতেমার চিকিৎসা চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সেখানে এক মাস থাকলে ফাতেমা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
হোসেনপুর উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের চরকাটিহারি গ্রামের মহিবুর রহমানের মেয়ে ফাতেমা আক্তার। গত তিন বছর ধরে মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে শিকলবন্দি জীবন ছিল ২১ বছর বয়সী ফাতেমার। এমনকি অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছিল না তার পরিবার।
মহিবুর রহমান সরদারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। সবার বড় বাবুল সরদার (৩৮) ও রফিক সরদার (৩৪)। এর পরে ছোট তিন মেয়ে সালমা (২৮), নাজমা (২৩) ও ফাতেমা (২১)।
পরিবারে সবার ছোট বলে এক সময় ফাতেমার দিন কাটত আদর-স্নেহ আর ভালোবাসায়। ২০১১ সালে উপজেলার হোগলাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি সে। তখন থেকেই ফাতেমা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। শুরুতে কিছুদিন চিকিৎসা করানো হলেও অর্থাভাবে স্থায়ী কোনো চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি।