আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
ই-ভ্যানে করে গ্রামে পৌঁছে যাবে ডিজিটাল শিক্ষা। গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষিসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও দিচ্ছে প্রযুক্তি নির্ভর ই-ভ্যান। আর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন আধুনিক ই-লার্নিংয়ের জনক বাংলাদেশের বদরুল হুদা খান।
ভারতের পর বাংলাদেশেও গত সপ্তাহে শুরু হয়েছে এই সেবা। এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ই-ভ্যান তার সেবা শুরু করেছে।
ই-ভ্যানে যা থাকবে : ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ই-ভ্যানে আছে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার। এছাড়াও রয়েছে প্রজেক্টর, ওয়েব ক্যামেরা, সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি। ভ্যানের বাইরের দেয়ালে রয়েছে জ্ঞানবাহনের স্লোগান ও শিক্ষা পদ্ধতির নির্দেশিকা নকশা। স্বল্পব্যয়ে ভ্রাম্যমাণ প্রয়োজনীয় শিক্ষার আয়োজনসহ দক্ষতা অর্জনের সুযোগও রয়েছে।
ই-ভ্যানের জনবল : ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ই-ভ্যানটি চালাতে এর চালক হবেন ‘জ্ঞানবাহক’। তিনি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ই-ভ্যানটি নিয়ে যাবেন। তার সঙ্গে থাকবেন একজন সহকারী ‘জ্ঞানবন্ধু’। কোথায়, কবে, কীভাবে ও কী ধরনের জ্ঞান দেওয়া হবে, তার সময়সূচি বা ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করাই হবে ‘জ্ঞানবন্ধু’র কাজ। গ্রামের মানুষের প্রয়োজন জেনে আগে ভাগেই তিনি পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করবেন।
এছাড়াও শেখানোর জন্য ভ্যানে থাকবেন একজন ‘জ্ঞান বিশেষজ্ঞ’। তাকে বড় কোনো ডিগ্রিধারী হতে হবে না, তবে নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষ জানাশোনা আছে এমন একজন ‘জ্ঞান বিশেষজ্ঞ’ হয়ে অন্যদের তা শেখাতে পারবেন।
ই-ভ্যান যা শিখাবে, যেভাবে শিখাবে : ই-ভ্যান থেকে সাধারণত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, হাতের কাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ সাধারণ-আইন সংক্রান্ত বিষয় শেখানো হবে। আর এভাবেই ই-শিক্ষা, ই-গভর্ন্যান্স, ই-ব্যাংকিং, ই-কমার্স, ই-স্বাস্থ্য, ই-কৃষিসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন সেবা ও সুবিধায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে মানুষ।

সপ্তাহের পাঁচ দিন যাত্রী পরিবহনের কাজ করবে ই-ভ্যান নামক জ্ঞানবাহন। নির্দিষ্ট সময়ে শিশুদের বিদ্যালয়ে পৌঁছেও দিবে। এসময় বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক ভিডিও দেখার পাশাপাশি শিক্ষামূলক গেমও খেলতে পারবে শিশুরা। সাধারণ যাত্রী পরিবহন করে আর্থিক উপার্জন করবে ই-ভ্যান। পাঁচ দিনের যাত্রী পরিবহনকালে এই আরোহীদের সঙ্গে জ্ঞান ভাগাভাগিও করবে। আর সপ্তাহের অন্য দু’দিন কোনো হাটে, স্কুল মাঠে বা কোনো গ্রামের বাড়ির উঠানে চলে যাবে। সেখানে কম্পিউটার, প্রজেক্টর দিয়ে আয়োজন থাকবে বাস্তব শিক্ষার চিত্রায়ন। এসব আয়োজনে রিসোর্স হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ।
ই-ভ্যানের আয়-উপার্জন ও ব্যয়ভার : সপ্তাহের পাঁচদিন যাত্রী পরিবহনে যে টাকা আয় হবে, তা থেকে জ্ঞানবাহক ও জ্ঞানবন্ধুর বেতন হবে। এ আয় থেকেই মেটানো হবে ই-ভ্যান ও এর যন্ত্রপাতি পরিচর্যার ব্যয়। এভাবে ই-ভ্যান নিজেই তার টিকে থাকা নিশ্চিত করবে। প্রতিটি ই-ভ্যানের একটি আঞ্চলিক এলাকা থাকবে। সাধারণত ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ই-ভ্যান চলবে। একটি অঞ্চলে বা গ্রামে একাধিক ই-ভ্যান কাজ করে সেবা দিয়ে যেতে পারবে।
ই-ভ্যানের যাত্রা শুরু কিশোরগঞ্জে : কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায় ই-ভ্যান নামক ‘জ্ঞানবাহন’ যাত্রা শুরু করেছে। এটিই বাংলাদেশে প্রথম ই-ভ্যান। গত ২৭ মার্চ বিকেলে এ ই-ভ্যান উদ্বোধন করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসেন ড. বদরুল হুদা খান। আর এ শুভক্ষণে যোগ দেন ই-ভ্যান প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত নিও ইনোভেশন ফাউন্ডেশন এবং এর প্রধান কার্যালয় কলকাতার হাওড়া থেকে এসেছিলেন ড. সঞ্জু সাহা, এর পরিচালক এস কে সৈকত ও মনির মল্লিক।
এছাড়াও নেতাজি সুভাষ বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সের শিক্ষক বর্ণালী রায় চৌধুরী এবং নিও ফাউন্ডেশনের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান ড. আফতাব উদ্দিন এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
ই-ভ্যান নিয়ে ড. বদরুল হুদা খান বলেন, ‘আমার উদ্যোগ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হবে আর বাংলাদেশে হবে না, তা কি হয়? কলকাতায় চালু হয়েছে কিছুদিন আগে, নেপালে হবে শিগগিরই, শ্রীলঙ্কায়ও হচ্ছে। বাংলাদেশে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে হলো, চট্টগ্রামেও হবে দ্রুত। অন্যান্য জেলার বিভিন্ন এলাকায়ও ঘুরবে এই ই-ভ্যান ‘জ্ঞানবাহন’র চাকা।

সূত্র : ই-ভ্যানে গ্রামে পৌঁছে যাবে ডিজিটাল শিক্ষা [বাংলা নিউজ, ৮ এপ্রিল ২০১৮]