মোঃ শফিকুল আলম রাজন ।।
দীর্ঘ সাত বছর যাবত এই সরকার আমাদের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। দীর্ঘ দু’টি রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মাঝে দলকে ঢেলে সাজানোর যে পরিকল্পনা ছিল স্থানীয়ভাবে অনেক ক্ষেত্রে তা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। সে সূত্রে আলোকপাত করতে চাই নিকলী উপজেলা বিএনপির সার্বিক মূল্যায়ন সম্পর্কে।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা সম্প্রতি নিকলী উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপহার হিসেবে নিকলীবাসীকে প্রদান করেন। উপহার শব্দটা এখানে বলতে হলো এই কারণে যে, বিএনপির তৃণমূলের সিংহভাগের মতামতকে উপেক্সা করে তারা ঢাকায় বসে একটি কমিটি আরোপ করে দেন। রাজনৈতিক সচেতন প্রতিটি ব্যক্তির আর বোঝার অবকাশ রইল না যে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই যার মূল লক্ষ্য।
দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিকলী বিএনপির কর্ণধার ছিলেন প্রয়াত মতিয়র রহমান বীর বিক্রম। যদিও তিনি এতদিন বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তথাপি তিনি কখনো জেলা থেকে কিংবা কেন্দ্র থেকে কোনো আরোপিত কমিটি নেননি। তিনি সর্বদাই পূর্ণাঙ্গ কাউন্সিল তথা তৃণমূলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েই দয়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুর পর নিকলী বিএনপি প্রকৃত অর্থেই অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই শুরু হয় একের পর এক নির্লজ্জ তথা নোংরা খেলা। রাতের আধারে ঢাকা অথবা কিশোরগঞ্জ থেকে সরাসরি নেতা হবার প্রতিযোগিতা। বিগত উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয় দল বিভক্তির উন্মত্ত খেলা। উপজেলা বিএনপির সভার রেজুলেশন ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ কাউন্সিলের মাধ্যমে আমাদের নিকলীবাসী তাদের পছন্দনীয় প্রার্থী খুঁজে বের করবে। এই সভার সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে জেলা সম্পূর্ণ তাদের একক সিদ্ধান্তে বিতর্কিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমাদেরকে একজন প্রার্থী চাপিয়ে দেয়। যদিও তিনি ছিলেন স্বঘোষিত আন্দোলনবিমুখ নেতা। তৃণমূল বিএনপির ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগের বদৌলতে বিভক্তিকেই তারা উস্কে দেয়। যাই হোক, আমরা তৃণমূল প্রতিটি নেতাকর্মী ভেবেছিলাম নিকলী উপজেলা বিএনপির ঐক্যবদ্ধ হবার শেষ সুযোগ হয়তো আবার এসেছে। মাননীয় দেশনেত্রী লন্ডন সফরে যাবার প্রাক্কালে উনার একটি মূল্যবান ঘোষণা আমাদের প্রতিটি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনে আশার সঞ্চার করেছিলো। উনি নির্দেশ দিয়ে যান দলের প্রতিটি স্তরে তথা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠন করে দলকে ঢেলে সাজাতে। আর তা তদারকি করতে দায়িত্ব দিয়ে যান মাননীয় যুগ্ম মহাসচিব শাহজাহান সাহেবকে। কিন্তু কেন্দ্রকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে নেত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে আজ জেলা যে কমিটি ঘোষণা করেছে তাতে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত প্রতিফলিত হয়নি।
তাছাড়া দলের ত্যাগী নেতাদের যে মূল্যায়ন তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কেননা, ঘোষিত অবৈধ এই কমিটির নেতৃত্বের আন্দোলনে ন্যূনতম অবদান রাখার কোনো নজির নেই। বর্তমান সভাপতি (ঘোষিত) উপজেলা কমিটির সভায় জোর হাতে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এই কারণে যে, তিনি দলের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় কোনো অবদান রাখতে পারেননি। নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করা এই নেতৃত্বকে আবার সভাপতির মতো এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কার স্বার্থে তা খুঁজে বের করার অবকাশ থেকেই যায়।
আর তাতে একটি জিনিসই আবার সুস্পষ্ট হলো সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এবং দলকে দুর্বল করে রাখার জন্যেই তাদের এই ষড়যন্ত্র। আমরা এর নিন্দা জানাই। জাতীয়তাবাদী প্রতিটি বিবেকবান কর্মী তাদের এই নীল নকশা বাস্তবায়ন হতে দিবে না।
লেখক : প্রাক্তন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদ।
ই-মেইল : sarazan5276@gmail.com