ঘাড়ের ব্যথা সারাবেন যেভাবে

ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এলোমেলো হয়ে ঘুমালে, অনেকক্ষণ যাবত কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে, বাঁকা ভাবে বসলে মাংসপেশিতে চাপ পড়লে অথবা ভারী কিছু বহন করলে যা কাঁধে অনেক চাপ দেয় ইত্যাদি কারণে ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যাটি হতে পারে। এছাড়াও অ্যাংজাইটি ও স্ট্রেস যা ঘাড়ের মাংসপেশিতে টান বা পীড়া উৎপন্ন করে, মানসিক আঘাত, ঘাড়ে আঘাত পেলে এবং কিছু রোগ যেমন- রিউম্যাটয়েড আরথ্রাইটিস, মেনিনজাইটিস বা ক্যান্সারের কারণেও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যাটিতে যে উপসর্গ গুলো দেখা যায় তা হল- ঘাড়ে খুব ব্যথা হয়, ঘাড় নাড়াতে সমস্যা হয় বিশেষ করে যখন মাথা কোন পাশে ঘোড়ানোর চেষ্টা করা হয়। ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা, কাঁধ ব্যথা ও বাহুতে ব্যথা হতে পারে। ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া কোন মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা না তবে এর ফলে প্রতিদিনের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ঘুমের সমস্যা হয়। এই সমস্যাটি কয়েকদিন বা এক সপ্তাহের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। যাই হোক আপনার জীবনাচরণের সামান্য কিছু পরিবর্তন এবং ঘরোয়া কিছু উপায়ে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন তাহলে জেনে নেই ঘরোয়া উপায় গুলো কী।

১। ম্যাসাজ
ঘাড়ের ব্যথা দূর করার জন্য একটি ভালো উপায় হচ্ছে মালিশ করা। ম্যাসাজ করলে মাংসপেশী শিথিল হয় এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কাঠিন্য দূর হবে এবং ঘুম ভালো হতে সাহায্য করবে। গরম পানি দিয়ে গোসল করলে মাংসপেশি শিথিল হয়। জলপাই তেল, সরিষার তেল বা নারিকেল তেল গরম করে ঘাড়ে মালিশ করুন কয়েক মিনিট যাবত। নিজে না পারলে মালিশ করার জন্য অন্য কারো সাহায্য নিন।

২। ঘাড়ের ব্যায়াম
ঘাড়ের ব্যায়াম ঘাড়ের ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া দূর করতে অনেক উপকারী। সোজা হয়ে বসুন, আপনার শরীরকে শিথিল হওয়ার জন্য সময় দিন।
# আপনার মাথাটি বুকের দিকে নামিয়ে আনুন, তারপর আকাশের দিকে তাকাতে তাকাতে মাথাটি পেছনের দিকে নিন। এইভাবে কয়েকবার করুন।
# আপনার মাথাটি একবার ডান দিকে কাঁত করুন তারপর বাম দিকে কাঁত করুন। এইভাবেও কয়েকবার করুন।
# আপনার শরীর না নাড়িয়ে মাথাটি আস্তে আস্তে ডান দিকে ঘুড়ান তারপর বাম দিকে ঘুড়ান। এইভাবে কয়েকবার করুন।
# আস্তে আস্তে কাঁধ ঘুড়িয়ে আপনার ব্যয়াম শেষ করুন।
# যদি কাঁধের এই ব্যয়াম করতে যেয়ে খুব বেশি ব্যথা অনুভব করেন তাহলে ব্যয়াম করা বাদ দিন।

৩। ঠান্ডা থেরাপি
ঠাণ্ডা থেরাপি দিলে অসাড়তার ব্যথা কমে এবং মাংসপেশির মেটাবলিজমের ফলে সৃষ্ট ল্যাকটিক এসিড তৈরি হতে বাধা প্রদান করে যা ব্যথা সৃষ্টির জন্য দায়ী। একটি পাতলা তোয়ালের মধ্যে বরফের টুকরা নিয়ে ঘাড়ের মধ্যে ১০-১৫ মিনিট চেপে ধরে রাখুন। প্রথম ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতি ২ ঘন্টা পরপর বরফের থেরাপি নিন।

৪। গরম থেরাপি
ঠান্ডা থেরাপি দিয়ে ব্যথা না গেলে গরম থেরাপি নিন। এক্ষেত্রে হট ওয়াটার ব্যগ বা হট ওয়াটার বোতল বা গরম পানিতে পাতলা তোয়ালে ভিজিয়ে ঘাড়ে দিতে পারেন। দিনে ২-৩ বার গরম থেরাপি নিন।
এছাড়াও যে বিষয় গুলোর প্রতি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে তা হল-
# ঘুমের সময় একের অধিক বালিশ ব্যবহার করবেননা।
# মোবাইলে অনেক বেশি টেক্সট করা থেকে বিরত থাকুন।
# বসে কাজ করার সময় সোজা হয়ে বসুন।
# নিয়মিত সাঁতার কাটলে ঘাড়ের ব্যথা প্রতিরোধ করা যায়।
# ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নেক কলার ব্যবহার করবেননা।
# যদি এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করার এক সপ্তাহ পর ও ব্যথা না ভালো হয় এবং যদি জ্বর থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

সূত্র : প্রিয়.কম

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!