আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
এসে গেল বসন্ত, চারিদিকে রং ভরানো সুন্দর ফুল আর গন্ধ। কিন্তু বছরে ঠিক এই ঋতুর সময়টায় এক রোগের ভাইরাস আমাদের আশপাশে বায়ুতে ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই গ্রাস করে; যার নাম বসন্ত বা চিকেন পক্স। এটা একটি ভেরিসেলা-জোস্টার নামক ভাইরাস থেকে হয়। শুরুতে জ্বর, গা ম্যাজম্যাজ, শরীর কমজোরি হতে থাকে, পেটের গণ্ডগোল দেখা দেয়। কিন্তু যখন পক্সে ফোস্কা বেরুনো আরম্ভ হল তখন আর রক্ষা নেই। ভোগাবে অন্তত ৭-১০ দিন আর তারপর সেরে উঠলে ডাক্তারের নিয়ম অনুযায়ী বিশ্রাম নিতে হবে ২১ দিন। শিশুদের হলে কিছুটা রক্ষে; কারণ কমের উপর দিয়ে যাবে। কিন্তু বয়সকালে হলে প্রচুর ভোগান্তি, সারা গায়ের এই ফোস্কা সারতে বহুদিন সময় নেয়। আর তারপর সেই দাগ যেতেও অনেক সময় লাগে।
এই রোগ যে ভাইরাসের দরুন ছড়ায় সেটা মূলত এই শীতের শেষ আর গরমের শুরুর সময় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। আর যাঁর শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা কম তাঁর পক্সের ঝুঁকি অনেক বেশি। একজনের থেকে কীভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস?
* রোগীর পক্সের ফোস্কার সংস্পর্শে এলে।
* রোগীর কাশি বা হাঁচি থেকে।
* রোগীর ব্যবহার করা জিনিসের ব্যবহার করলে।
* গর্ভবতী মায়ের থেকে শিশু এবং নবজাতক শিশুর হতে পারে যদি জন্মোত্তর মায়ের এই রোগ হয়।
যেহেতু এটা একটা প্রাকৃতিক ভাইরাস তাই সাবধানতা অতি বাঞ্ছনীয়। অনেকেরই ধারণা চিকেন পক্স জীবনে একবার হয়। ২ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো কারণে ভাইরাস সাপ্রেসড রয়ে গেলে তাঁদের ২-৩ বারও চিকেন পক্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রকৃতি বন্ধু
এই সময় প্রকৃতিও অনেক কিছু জোগান দেয় আমাদের এই ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করার জন্য। যেমন- সজনে ফুল, সজনে শাক, নিমপাতা আর করলা। সঙ্গে শীতের কমলালেবু আর আমলকি থেকেও ভিটামিন সি-এর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানো যায়। আমরা যদি সঠিকভাবে এগুলো খাই তাহলে বসন্ত হওয়ার সম্ভাবনা একটু কমে যায়।
হোমিও ওষুধ
ভেরিওলিনাম ২০০ এমএল নামক একটি ওষুধ ৭ দিন- শিশুদের ক্ষেত্রে ২টি করে বড়ি, আর বড়দের ক্ষেত্রে ৪টি করে বড়ি দিনে দু’বার খেতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে ৭ দিন খেয়ে নিলে নিশ্চিন্ত।
জেনে রাখা দরকার
* একবার যখন ফোস্কা বেরুনো আরম্ভ হল তারপর যদি এই ভাইরাসকে সাপ্রেস (চেপে) দেয়া হয় ওষুধের মাধ্যমে, পরবর্তীকালে বিভিন্ন রোগ হতে পারে- যেমন নিউমোনিয়া, সেপটিক টনসিলাইটিস, রিউম্যাটয়েড আথ্রাইটিস, রিউম্যাটয়েড ফিভার ইত্যাদি।
* রোগ হয়ে গেলে যখন রোগীর ফোস্কা শুকতে শুরু করে, তখন খুব সাবধানতার সঙ্গে ওগুলো একটা দেশলাই বাক্সে জমিয়ে পুড়িয়ে দেয়া উচিত, কারণ এ থেকে রোগ অন্যের শরীরে ছড়াতে পারে।
আয়ুর্বেদে সমাধান
এই রোগ মূলত ছোট শিশুদের আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দু’বছরের শিশুদের হয়। বড়দের হলেও কম হয়। তার কারণ হল, বাচ্চা বয়সে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম হয়। এই জন্য চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন বাচ্চাদের ১২-১৫ মাসে একবার আর ৪-৬ বছর বয়সে আর একটা দেয়া হয়। কিন্তু যেহেতু অনেকে এটা নেন না তাই ভবিষ্যতে চিকেন পক্স হওয়ার সম্ভাবনা থেকে। তাই শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে আয়ুর্বেদিক উপায় কিছু রয়েছে তা মেনে চলা প্রয়োজন। এগুলি হল-
শিশুদের ক্ষেত্রে
* তুলসি অ্যান্টিভাইরাস, তাই ২-৪ তুলসি পাতার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ানো।
* গুলঞ্চর রস অর্ধেক চায়ের চামচ সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ানো।
* গুলঞ্চর পাউডার ১২৫ মি.গ্রা. মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো।
বড়দের ক্ষেত্রে
* ৭-৮ তুলসি পাতা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ান।
* ৩ চা-চামচ গুলঞ্চর রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ান।
* গুলঞ্চর পাউডার ২৫০ মি.গ্রা. মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ান।
এর সঙ্গে সজনে ফুলের রস, আমলকির রস (যাঁরা আমলকি খেতে পারেন না তাঁরা কিউয়ি ফুলের রস), ঘৃতকুমারীর রস এবং পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানো খুবই প্রয়োজনীয়।
একদম বারণ
বয়স যাই হোক, ফেব্রুয়ারি আর মার্চ মাসে দু’টি জিনিস খাওয়া একদম বন্ধ। তাহলে চিকেন পক্সের সম্ভাবনা কিছুটা রোধ হয়। তা হল-
* পাঁঠার মাংস
* দুধ বা যে কোনও রকম দুধের তৈরি জিনিস
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন (ভারত)