আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেহারায় তিনি তার আড়াই বছর বয়সে হারানো মাকে খুঁজে পেয়েছেন। “আজ উনাকে দেখে আমি দীর্ঘক্ষণ তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি আড়াই বছর বয়সে আমার মাকে হারিয়েছি। আমার একটা ভাই ছিল। তার বয়স ছিল তখন মাত্র দেড় বছর। বহুদিন আগে জীবনে প্রথম আমি আমার এক প্রাথমিক শিক্ষিকার চেহারায় আমার মাকে খুঁজে পেয়েছিলাম। আজ প্রধানমন্ত্রীকে দেখে আমি তাঁর চেহারায় আমার হারানো মাকে দেখতে পেয়েছি।”
নুর শনিবার (১৬ মার্চ ২০১৯) বিকেলে গণভবনে ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের সাবেক সহ-মানবসম্পদ সম্পাদক নূর বলেন, “আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শুধু একজন কর্মীই ছিলাম না, একজন ছোট নেতাও ছিলাম। আমি ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “বিএনপি”র “আন্দোলনের” সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যাওয়ার সময় আমি নেতাকে (শেখ হাসিনাকে) দেখেছিলাম। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম। আমি তখন উনাকে রাস্তা দিয়ে গাড়িতে করে যাওয়ার সময় দেখতে পাই। কিন্তু গাড়ির কালো গ্লাসের ভেতর দিয়ে আমি স্পষ্টভাবে দেখতে পাইনি। টেলিভিশনেও আমি উনাকে দেখেছি।”
তিনি বলেন, “টেলিভিশনে আমরা তাঁর বিশেষ বৈশিষ্টগুলো দেখতে পাই যে তিনি সহজভাবে একটা শিশুকে তাঁর বুকে টেনে নিচ্ছেন এবং একজন সাধারণ নারীর মতো সাদাসিধা আচরণ করছেন। আমরা তাঁর সাফল্য, সংগ্রাম ও আন্দোলনের কথা শুনেছি।”
ডাকসু ভিপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মহত্ত্ব ও অর্জনের কথা শুধু আমাদের কাছে নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের জানা। “যদিও একজন ব্যক্তির সব গুণাবলী থাকে না তবুও বলবো আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতার সকল গুণাবলী ধারণ করছেন।” ডাকসু ভিপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসামান্য উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। নেতৃত্বের কারণে তিনি বিশ্বের মহান নেতৃবৃন্দের মাঝে নিজের স্থান করে নিয়েছেন। তিনি আমাদের প্রিয় নেতা।”
তিনি ডাকসু ও হল সংসদের নেতৃবৃন্দকে গণভবনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। নুর বলেন, “দীর্ঘ ২৮ বছর পর তাঁর সরকারের আমলে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি এমন একটি ঝুঁকি নিয়েছেন, ১৯৯০ পরবর্তী কোনো সরকারই যে ঝুঁকি নিতে চায়নি।”
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসাবে আমি বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোন অন্যায়কে মেনে নেয় না এবং সবসময়ই ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থী প্রত্যেকটি শুভ উদ্যোগের সাথে থাকবে।” আবাসন সংকটকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অন্যতম সমস্যা হিসাবে উল্লেখ করে ডাকসু ভিপি এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় মনোযোগ আকর্ষণ করেন।
ডাকসু ভিপি বলেন, “আপনি বলেছিলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মনে করি, যাদেরকে ওই বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তাদের সীমাবদ্ধতার কারণেই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ আমরা জানি, আপনি তরুণদের হৃদস্পন্দন বুঝতে পারেন। আপনি তরুণদের সাথে ‘লেটস টক’ শীর্ষক সেমিনার করেছিলেন। তাই আমি মনে করি, আপনার কাছে সঠিক খবর পৌঁছে নাই।”
তিনি বলেন, “২০০৬ সালে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় আমি আমাদের স্কুলের ছাত্রলীগ কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর, দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রাবস্থায় আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের হাজী মোহাম্মদ মহসিন হল কমিটির উপ-মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম।”
নুর বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তাকে জামায়াত-শিবিরের কর্মী হিসাবে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। “প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার পরিবার সম্পর্কে সকল তথ্য রয়েছে। তিনি লক্ষ্য করে থাকবেন, আমার পরিবারের প্রত্যেকের আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমি মনে করি, তৎকালীন ছাত্রলীগের ব্যর্থতার জন্যই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছিল। আমি মনে করি, এ বিষয়টি আপনি যথাযথভাবে দেখবেন। কারণ আপনার কাছে কোনো তথ্যের ঘাটতি থাকা উচিত নয়।”
ডাকসু ভিপি বক্তব্য শেষ করার পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করেন এবং মঞ্চে তাঁর (শেখ হাসিনা) পাশে বসেন। বাসস