এটিএম কামাল ।।
বাবা দিবসে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল তার বাবা মরহুম এম এ তাহের মাস্টারকে নিয়ে ফেসবুকে একটি স্মৃতিচারণমূলক লেখা পোস্ট করেছেন। লেখাটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
স্মরণ : বাবা আমার বাবা, আমরা ভাইবোনেরা ডাকতাম আব্বা। জীবদ্দশায় যাকে আমি এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি দিইনি। ছেলেবেলায় আমার বিরুদ্ধে শত অভিযোগের যন্ত্রণায় তটস্থ থাকতে হতো, লেখাপড়ায় অমনোযোগী হওয়ায় প্রতিনিয়ত গৃহশিক্ষক ও স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগের কারণে শিক্ষকের পর শিক্ষক ও স্কুলের পর স্কুল বদল করতে হয়েছে তাকে।
৭১ এ বাড়ি থেকে পালালাম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে। স্বাধীনতা-উত্তর সোনারগাঁ থেকে নারায়ণগঞ্জে আসার পর বার একাডেমীতে ভর্তি করিয়ে দিলেন। কিন্তু পড়ালেখায় তো আমার মন নেই। বাড়ি ছেড়ে আবার পালালাম বান্দরবানে যাব। কমরেড সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টিতে যোগ দিতে। আব্বা পাগলের মত খুঁজে খুঁজে চৌদ্দগ্রাম থেকে আমাকে ফিরিয়ে আনলেন। আরো কত যন্ত্রণা যে আমি দিয়েছি যা বলে শেষ করতে পারব না। তারপরেও ধৈর্য হারাননি তিনি।
আহা রে! আমাকে একটি সুন্দর জীবন ও ভবিষ্যত দেবার কি প্রাণান্তকর চেষ্টা। তারপর শীতলক্ষার পানি কত গড়ালো, মেঘে মেঘে কত বেলা এলো গেলো তার হিসেব কে রাখে। ১/১১ পর থেকে যখন আমি ঘন ঘন জেলে যাচ্ছি, তখন থেকেই আব্বার শরীরটা ভাঙ্গতে শুরু করলো। আমি যখন জেলে থাকি সারারাত তিনি জেগে থাকেন। কারাগারে আমি শোয়ার জায়গা পেয়েছি কিনা, ঠিকমত খাবার পাই কিনা। রিমান্ডে নিয়ে মারে কিনা এ নিয়েই শত টেনশন।
মাঝে জেল থেকে বের হওয়ার পর একদিন আব্বা আমাকে ডেকে বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আমার বাড়ির তোর অংশটুকু তোর বউ-ছেলেমেয়ের নামে লিখে দিব। তুই রাজনীতির পিছনে পাগলের মত টাকা খরচ করিস। তোর বিদেশের ২০ বছরের কামাই শেষ করেছিস, তোর বউয়ের গয়নাগাটিও রক্ষা পায়নি। এখন তুই আমার বাড়িটাও বিক্রি করে ফেলবি।
আব্বার শেষ ইচ্ছা তিনি পূরণ করে যেতে পারেননি। ৮ মাস ৭ দিন পর জেল থেকে বের হয়ে হাসপাতালে গেলাম আব্বাকে দেখতে। উনি তখন একেবারেই ঘুমাতে পারেন না। রাতদিন বিছানাতেই বসে থাকেন। আমাকে দেখে কাছে ডেকে পাশে বসতে বললেন। অনেকক্ষণ বাপ-ছেলে চুপচাপ বসে রইলাম। একসময় বললাম আব্বা যাই। এখন চলে যাবি! পরে যা। বললাম সকালে আসবো। আসবি কিন্তু। এই ছিল আমার শোনা তাঁর শেষ কথা। ভোর রাতে ছোটবোন শাহীনের ফোন, আব্বা নাই। ছুটে হাসপাতালে গেলাম। আব্বা তখন ঘুমাচ্ছেন….গভীর……শান্তির ঘুম।
লেখক : এটিএম কামাল, সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি।