খালিয়াজুরীতে অবশিষ্ট জমি রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের আপ্রাণ চেষ্টা

খালিয়াজুরী (নেত্রকোণা) সংবাদদাতা।।

ক’দিনের ঢলের পানিতে বিভিন্ন বাঁধ ভেঙ্গে শস্যভাণ্ডার খালিয়াজুরীর শতকরা ৭০ ভাগ বোরো ফসল জলে ডুবে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ মেরামতের মাধ্যমে অবশিষ্ট জমি রক্ষায় এখানে এখন চলছে আপ্রাণ চেষ্টা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে আবাদ করা ২০ হাজার ১৭০ হেক্টর বোরো ফসলের মাঝে শতকরা ৭০ ভাগ ফসল এ কয়েক দিনের ঢলের পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে। ধান এখন ফ্লাওয়ারিং ও মিল্কিং স্টেজে থাকায় তলিয়ে যাওয়া ফসল খুব দ্রুত বিনষ্ট হয়ে যাবে। বর্তমান বাজার দরে এখানে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে। এখানকার বেঁচে থাকা অবশিষ্ট জমি রক্ষার জন্য হাজার হাজার কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে রাত-দিন খেটে গছিখাই নামার বাঁধ, গোরস্থানের বাঁধ, বেরীখালির বাঁধ, পাইয়ার বাঁধ, ছায়ার বাঁধসহ ৮-১০টি বাঁধ টিকিয়ে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জব্বার জানান, খালিয়াজুরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ সঠিক সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে হলে এত বেশি ফসলের ক্ষতি হতো না। পাউবো এখানে বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশ কাজও করেনি। পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ঠিকাদাররা মিলে এখানে প্রতিবছরের মতো এবছরও প্রকল্পের নির্দিষ্ট সময় ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু না করে নানান অজুহাতে অধিকাংশ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পানি আসার আগ মুহূর্তে। কিছু কাজ করতে না করতেই বাঁধগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বাঁধে কি পরিমাণ মাটি কাটা হয়েছে তার কোন হিসেব অন্য আর কেউ পাচ্ছে না। প্রকল্প স্থানে কাজের বিবরণ, কাজের মেয়াদকাল ও বরাদ্দের পরিমাণ জানিয়ে সাইনবোর্ড ব্যবহার না করে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগনগণকে তারা অন্ধকারে রেখে সুবিধা অনুযায়ী প্রকল্পের টাকা পকেটস্থ করছেন।

নেত্রকোনা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের বলেন, এখানকার কাজে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ পাউবো কোন দোষই করেনি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান তালুকদার সুয়েবসহ একাধিক জনপ্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্ত খালিয়াজুরীকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলেন, একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল খালিয়াজুরীর অধিকাংশ কৃষকই ধার-দেনা করে ফসল বপন করেছিলেন। বাঁধ ভেঙ্গে এ ফসল পানিতে তলিয়ে যাবার কারণে তাদের মাঝে এখন শোকের মাতম চলছে। কেউ কেউ ডুকরে কাঁদছেন। এখানে গবাদি পশুসহ অসংখ্য মানুষের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। পাঁচহাটসহ কয়েকটি বাজারে ৪০ টাকা কেজির চাল কিনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন খালিয়াজুরীর ফসল রক্ষা বাঁধ ও ক্ষতিগ্রস্ত হাওর পরিদর্শন করে বলেন, নেত্রকোনা পাউবো’র সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে এখানে বাঁধ ভেঙ্গে শতকরা নব্বই ভাগ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতির বিষয়সহ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে খুব দ্রুত তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলবেন।

Similar Posts

error: Content is protected !!