সংবাদদাতা ।।
নিকলীর ছোট-বড় হাওর, নদী, খাল-বিল, বিভিন্ন জলাশয়ে শত শত হাঁসের পাল পানিতে দল বেঁধে বিচরণ করছে। কখনো প্যাক প্যাক করে ডেকে ওঠে এক ঝাঁকে। কখনো এক তালে পানিতে ডুব দেয় সাদা, কালো নানা রঙের হাঁস। দলবেঁধে চলার রয়েছে নিপুণ ছন্দ। সরেজমিনে সোয়াইজনী, নরসুন্দা, ঘোড়াউত্রা, রোদা নদী ও দিগন্ত বিস্তৃত ছোট-বড় হাওরে গিয়ে চোখে পড়ে খোয়ারে (রাতের বেলা হাঁসের থাকার জায়গাকে খোয়ার বলে) ঝাঁকে হাঁসের পাল। এখন নদীর তীরগুলি হয়ে উঠেছে হাঁসের খোয়ার স্থাপনের উৎকৃষ্ট স্থান। বর্ষাকালে নদী, শুকনো হাওর পানিতে ডুবে যায়। তখন খোয়ারকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।
এক সময় মানুষ শখ করে নিজেদের প্রয়োজনে হাঁস পালতো। জীবিকা নির্বাহ ও সময়ের প্রয়োজনে প্রায় ২০ বছর আগে নিকলী নগরের কিনুমিয়া, ইসরাইল, টিক্কল হাটির তাহের আলী সোয়াইজনী নদীর তীরে হাঁসের খোয়ার তৈরি করেন। তাদের সফলতা ও দেশে ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন হাওরে ব্যাপকসংখ্যক খোয়ার তৈরি হয়েছে। বরুলিয়া হাওরে কৃষি জিরাতি, নিকলী সদরের দোয়ার হাটির রতন জানান, কৃষিজমি, গরু পালনের পাশাপাশি হাওরে ১২০টি হাঁস নিয়ে একটি খোয়ার স্থাপন করে প্রতিদিন হাসের ডিম বিক্রি করে এক হাজার টাকা আয় করতে পারি।
সোয়াইজনীতে একজন হাঁসের খোয়ারের মালিক নাগারছি হাটির কাজল মিয়া জানান, কৃষি জমি, ব্যবসার পাশাপাশি দুই শত হাঁসের খোয়ার স্থাপন করে হাঁসের খাদ্য, ওষুধ কেনা বাদ দিয়ে ডিম বিক্রি করে প্রতিদিন হাজার/পনেরশ’ টাকা আয় করতে পারি। উপজেলার ভিতরে ডিম কেনার জন্য রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন পায়কারি ক্রেতা। মোহরকোনার আলী আহমদ, বিল্লাল, আসাদ; নাগারছিহাটির হাবিবুর রহমান, কুর্শার আতিক প্রমুখ পাইকারী ক্রেতারা খোয়ার থেকে ডিম সংগ্রহ করে বাক্স ভর্তি করে ট্রাকে উঠিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ডিমের আড়তে চালান দেন। পাইকারি বিক্রেতা কুর্শার আতিক হোসেন জানান, সপ্তাহে ২ টিপে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ ডিম চালান করতে পারি। মাসে অর্ধকোটি টাকার ডিম চালান করা যায়। হাওরের হাঁসের খোয়ারগুলি দেশের প্রোটিন ঘাটতি পূরণে কিছুটা হলেও সহায়ক হচ্ছে। ব্যাপক আকারে শুরু করতে হলে দরকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। আশা করি দায়িত্বশীলরা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন।