প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হাওরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

খালিয়াজুরী থেকে দিলীপ চন্দ্র বর্মন ।।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খালিয়াজুরীর কৃষকদের অভয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা চিন্তা করবেন না। আগামী ফসল না উঠা পর্যন্ত সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। নেত্রকোনার একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না; প্রতিটি মানুষের মাথা গুজার স্থান করে দিব।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হাওর আমাদের মূল্যবান সম্পদ। হাওরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। হাওরের প্রাকৃতিক অবস্থা বিবেচনা করে উন্নয়ন-অবকাঠামোসহ সব ধরনের কাজ করতে হবে। হাওরের একমাত্র ফসলের জন্য নদ-নদী, খাল-বিল ও ভরাট হওয়া হাওর খনন করতে হবে।’

অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর পরিদর্শনে গিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ১৮ মে প্রধানমন্ত্রী নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি সকাল ৯.৫৫ মিনিটে খালিয়াজুরী উপজেলা কলেজ মাঠে ফসলহারা কৃষকদের মাঝে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তার কথা তুলে ধরেন। ১১টা ৬ মিনিট থেকে ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত তিনি হাওরের বিভিন্ন বিষয় ও দুর্গতদের সহায়তা নিয়ে কথা বলেন। প্রায় ৪৪ মিনিটের বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী হাওরে বাঁধ তৈরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আহ্বান জানান সংশিষ্টদের প্রতি। হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নানা সহায়তার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি ব্যাংক কৃষকের ঋণের সুদ অর্ধেক মওকুফ করেছে। স্থগিত করেছে কৃষিঋণ আদায়। আমি শুনেছি এনজিওরা হাওরের দুর্গত কৃষকদের ঋণ আদায়ে চাপ দিচ্ছে। আমি এনজিও ব্যুরোকে নির্দেশ দিবো যাতে তারা আমার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছ থেকে ঋণ আদায় স্থগিত করে।’

হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ঐতিহ্য স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওরের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুগ যুগ ধরে যুদ্ধ করে টিকে আছে। প্রতিনিয়ত পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাওরের কৃষক। একমাত্র ফসল চলে গেলে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ে। তিনি বলেন, ‘আপনাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আমিও ১৯৭৫ সালের এক রাতে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন আপনাদের মুখে হাসি ফোটানোর কাজ করছি।’

হাওরের কৃষকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। আগামী ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত আপনাদের সহায়তা অব্যাহত রাখব। আগামী ফসলের জন্য বিনামূল্যে সার, বীজ ও কৃষি উপকরণ দেয়া হবে। অব্যাহত রাখা হবে অন্যান্য কৃষিভর্তুকি।’ প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি ইউনিয়নে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি (ওএমএস) সুবিধা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা দেন। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে যত খাবার নষ্ট হয়েছে তা সরবরাহের নির্দেশনা দেন।

গো-খাদ্য নিয়ে শঙ্কিত কৃষকের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আপনাদের গো-খাদ্যের ব্যবস্থা করব। আমি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশনা দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, একটি এলাকার ফসল নষ্ট হলেও খাদ্যে ঘাটতি হবে না। সাহস নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। বর্তমান সরকার সব সময় এ অঞ্চলের মানুষের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কেউ না খেয়ে কষ্ট পাবেন না। যত বড় দুর্যোগই আসুক, বর্তমান সরকার তা মোকাবেলার ক্ষমতা অর্জন করেছে। তাই দেশের কোনো মানুষই না খেয়ে কষ্ট পাবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, আপনারা নিশ্চিত থাকবেন দুর্নীতি প্রমাণ হলে কেউই রেহাই পাবে না। শাস্তি পেতেই হবে। আগামী বছর কিভাবে বাঁধ নির্মাণ হবে, কখন করতে হবে এই নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে যাতে করে সঠিক সময়ে বাঁধ নির্মাণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য চলমান ওএমএস-এর কেন্দ্র ইউনিয়ন পর্যায়ে নেয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, দুর্যোগের সময় যারা জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নিতে হয় তা জানা আছে। সুতরাং কেউ মজুদদারি করে দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়ে পার পাবেন না। তিনি বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আরো বলেন, ক্ষমতায় এসে নেত্রকোনার ১২ জন আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে খুন করেছে, তারা অনেক নেতাকর্মীর বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদে পরিণত করেছে। এ সময় তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের তাদের তাণ্ডবের বর্ণণা দেন তিনি।

পরে প্রধানমন্ত্রী ৭০ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি চাল ও ১০০০ টাকা করে ত্রাণ দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বল্লভপুর গ্রামে গিয়ে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন।

উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবা উদ্দিন সিরাজ, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিউর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক আশ্রাব আলী খান খসরু, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, যুব ও মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের পংকজ দেবনাথ, আওয়ামীলীগ নেতা সামছুল আলম লিটন, সফি আহম্মেদ প্রমুখ।

Similar Posts

error: Content is protected !!