মল্লিকা বেগম এবং তিন তরুণের গল্প


কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা ।।

২৫ মার্চ ২০১৭। ভোর থেকেই আকাশের অবস্থা মেঘে আচ্ছন্ন। সকাল ৮টার পর থেকেই শুরু হয় ঝড়ের তুমুল তাণ্ডব। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের হারিনা গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি, বিধবা হতদরিদ্র মল্লিকা বেগমের একমাত্র সম্বল টিনের ছাউনির ঘরটি। স্থান হয় খোলা আকাশের নিচে।

ঝড়ের পরেই ভাঙ্গা ঘরের পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন পাইকসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান সবুজ। সবুজ ফেসবুকে আপলোড করেন ভাঙ্গা ঘরের সামনে মল্লিকা বেগমের আহাজারির ছবি। পাশের গ্রামের রাজীব সরকার পলাশ দেখতে পান সেই ছবি। ছবি ডাউনলোড করে আবার পোস্ট দেন রাজীব। তার পোস্টের পরদিন খোঁজ নেন ফেসবুক বন্ধু তারেক হাসনাত তারেক। তারেক এই ছবি পোস্ট দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

রাজীব জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলি। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে এ সংবাদটি ছাপা হয়। আমরা কয়েকদিন অপেক্ষা করি তবুও সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফেসবুকে অনেকেই তখন এতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একদিন আমরা ৩জন একসাথে বসে সিদ্ধান্ত নেই কি করা যায়। ঘর তুলে দিতে টাকার পরিমাণ নিয়ে একটা আলোচনা করি। মোটামুটি ২৫০০০ টাকা হলে ঘরটি নির্মাণ করা যায় বলে আবার ছবিসহ স্ট্যাটাস দেই। টাকা আসুক আর না আসুক আমরা ঘর তৈরি করে দেব। সাহায্যের আবেদন দিয়ে ৩ জনই স্ট্যাটাস দেই। পুরো এপ্রিল মাসে মোট ৩৬৯০০ টাকা জমা হয়।’

এর পরেই শুরু হয় নির্মাণ কাজ। ১৩ মে ভিটপাকা করে ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়। পরে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ১০,০০০ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। এ বছরের ১৪ মে রোববার দুপুরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফজলুর রহমান, রাজীব সরকার পলাশ, হাসনাত তারেক, সাইদুর রহমান সবুজ, খোরশেদ আলম, শহীদুজ্জামান এবং এলাকার ৪০ জন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে ঘরের চাবি মল্লিকা বেগমের হাতে তুলে দেয়া হয়।

আজ সোমবার ৯ অক্টোবর দুপুরে উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে মল্লিকা বেগমের হাতে ৭৯০০ টাকা মূল্যের ছানাসহ ছাগল এবং অতিরিক্ত ৪৮০০ টাকা নগদ তুলে দেয়া হয়। এসময় মল্লিকা বেগম আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

Similar Posts

error: Content is protected !!