হাটহাজারীতে অগোছালো আন্দোলনে জনজীবন বিপর্যস্ত

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।

টানা কয়েকদিন ধরে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ছোঁয়া লেগেছে হাটহাজারীতে। তবে সরকারি দলের কয়েকজন নেতার অনুরোধে সরে দাঁড়ায় আন্দোলনকারীরা। একদিকে শিক্ষার্থীদের পরিবহনের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট। এসব মিলে রোববার (৫ আগস্ট ২০১৮) ভোর থেকে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কসহ মোট ২২টি সড়কের যান চলাচলের এক হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই হ-য-ব-র-ল অবস্থার কবলে পড়েছে ২২টি সড়কের হাজার হাজার যাত্রীসাধারণসহ মহিলা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে।

অপরদিকে ট্রাফিক সপ্তাহের কর্মসূচিও পালন করা হয় হাটহাজারীতে। এই ট্রাফিক সপ্তাহে ট্রাফিক পুলিশদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুল শিক্ষার্থীসহ চট্টগ্রাম নাজিরহাট-খাগড়াছড়ি বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উত্তরজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আলহাজ্ব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু। ট্রাফিক র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম, হাটহাজারী মডেল থানার ওসি বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর। ট্রাফিক টিআই শাহ মাহমুদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম, সার্জেন রবিউল হোসেন, সার্জেন ইবরাহিম, সার্জেন সাইফুল ইসলাম সহ মডেল থানার সকল মহিলা ও পুরুষ পুলিশরা ট্রাফিক পুলিশ সপ্তাহের র‌্যালিতে অংশ নেন। র‌্যালিটি মডেল থানা থেকে বের হয়ে সদর বাসস্টেশন জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।

এদিকে গত শনিবার থেকে হাটহাজারীর সকল শিক্ষার্থীসহ জনমুখে প্রচারিত রয়েছে যে রোববার স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হাটহাজারী বিভিন্ন সড়কে শুরু হবে। কিন্তু রোববার স্কুল সময়ের আগে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের যৌথ সহযোগিতায় আন্দোলনের কথা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বললে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেনি। তবে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রাস্তাঘাটে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। রোববার থেকে শুরু হয় দেশব্যাপী ট্রাফিক পুলিশ সপ্তাহ।

একদিকে যানবাহনের বিরুদ্ধে রয়েছে ট্রাফিক সপ্তাহ অন্যদিকে অধিকাংশ যানবাহনের নেই ফিটনেসসহ যাবতীয় বৈধ কাগজপত্র ও চালক এবং হেলপারদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। পাশাপাশি সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে গাড়ি বৈধ কাগজপত্র নেই, চালকদের লাইসেন্স নেই ও অপ্রাপ্তবয়স্ক, অদক্ষ চালক গাড়ি চালাচ্ছে। এসব মিলে যেন কার কথা কে শুনে। কে কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তা বুঝে উঠতে পারছে না সাধারণ মানুষসহ যাত্রীগণ। অদক্ষ চালকদের প্রভাবে যত্রতত্র সড়ক দুর্ঘটনায় চলে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। সব মিলিয়ে হাটহাজারীর সড়কে অগোছালো আন্দোলনে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

যান চলাচল না থাকায় দুই পার্বত্য অঞ্চল রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি জেলা থেকে অপরদিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে সবজি না আসায় হাটহাজারীতে সবজির বাজারে দাম যেন আকাশ ছোঁয়া। পাশাপাশি সড়কে কোনো একটা রিকশা বা সিএনজি দেখা গেলে যাত্রীসাধারণ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু ধর্মঘট থাকার কারণে উক্ত গাড়িগুলো বেশিদূর যেতে পারে না। তবে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলাচল করতে দেখা যায়নি। বিকাল তিনটা নাগাদ কিছুটা ছোটখাটো যান চলাচল করতে দেখা গেলেও ধর্মঘট আহ্বানকারীদের কাছে বাঁধা পড়ে।

হাটহাজারী বাসস্টেশন, সুবেদাপুকুর পাড়, মেডিকেল গেইট, মিরেরহাট, হাটহাজারী কলেজ গেইট, চৌধুরীহাট সহ নাজিরহাট সড়কের বেশ কয়েকটি জায়গায় ধর্মঘট আহ্বানকারীদের ব্যারিকেড সৃষ্টির কারণে যান চলাচল করতে পারেনি। হালকা-পাতলা দু’একটি গাড়ি চলাচল করলেও যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তাদের গন্তব্য স্থানে যেতে হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হাটহাজারীতে তেমন প্রভাব পড়েনি। কারণ, শিক্ষার্থী, প্রশাসন এবং সরকারি দলের ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগ, যুবলীগের মধ্যে ব্যাপক সমন্বয়তা থাকার কারণে আন্দোলন চালায়নি শিক্ষার্থীরা। সকালে দু’একটি এলাকায় আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিলেও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রাসেল বুঝিয়ে বললে তারা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়।

Similar Posts

error: Content is protected !!