আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
সম্প্রতি নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জাতীয় সংবাদ মাধ্যম সমকাল। পুরো রিপোর্টটি আমাদের নিকলী.কম-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে। তিনি একদিনের জন্য ছুটিতে গেলে বিশাল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতান্ত বাধ্য না হলে কোনো রোগী আসেন না। তীব্র চিকিৎসক সংকটের কারণে এলাকার গরিব ও দরিদ্র রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে জরুরি সেবা পাচ্ছেন না। ফলে উপজেলায় বসবাসকারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
গত শুক্রবার সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। বিভাগটি ফাঁকা পড়ে আছে। রোগীরা চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাচ্ছেন। উপজেলার দামপাড়া গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি যমজ মেয়েদের হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন ঠাণ্ডাজনিত রোগের চিকিৎসা করাতে। কিন্তু জরুরি বিভাগে চিকিৎসক না পেয়ে তিনি প্রাইভেট চেম্বারে হাসপাতালে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. আবু সাঈদকে ১০০ টাকা ভিজিট দিয়ে মেয়েদের দেখিয়েছেন। তিনি জানান, চিকিৎসক না পেয়ে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সামনে চেম্বারে মেয়েদের চিকিৎসা করাতে বাধ্য হয়েছেন।
সংবাদকর্মী আসার খবর পেয়ে হাসপাতালে কর্মরত আরএমও ডা. সারোয়ার জাহান দেখা করতে আসেন। ডা. সারোয়ার জাহান জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু আছেন মাত্র দু’জন চিকিৎসক। আজ (শনিবার) তিনি চলে যাবেন। তাই হাসপাতালে কার্যত একজন চিকিৎসক কাজ করবেন। তিনি বলেন, ‘বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫০ জন রোগীকে সামাল দিতে একজন চিকিৎসকের পক্ষে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে ১০ জন সেবিকার স্থলে আছেন মাত্র তিনজন। এ কারণে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হতে চান না। ভর্তি হওয়ার পর সেবা দেয়ার মতো সেবিকা তারা পান না। দীর্ঘদিন ধরে নিকলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট চলছে। চিকিৎসকদের নিয়োগ দেয়া হলেও তারা কর্মস্থলে যোগ দেন না। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিয়োগ বাতিল করে অন্যত্র নিয়োগ নিয়ে চলে যান। ফলে নিকলী উপজেলায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। প্রতিদিন দূর-দূরান্তের গ্রাম থেকে অসংখ্য রোগী এখানে এসে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী দামপাড়া গ্রামের আবু বক্করসহ (৩৫) একাধিক রোগী জানান, পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে আসেন। কিন্তু কোনো চিকিৎসক না থাকায় তারা বাজারে একজন পল্লী চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। জনবলের অভাবে প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ থাকায় সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। ফার্মাসিস্ট না থাকায় স্টোরে ওষুধ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের সরবরাহ করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। কিন্তু চালক না থাকায় অচল হয়ে পড়ে আছে।
কর্মরত সেবিকা চারুবালা দাস জানান, ১০ জন সেবিকার মধ্যে মাত্র তিনজন কর্মরত রয়েছেন। দুই বছরে তিনি কোনো ছুটি নেননি। কারণ ছুটি নিলে হাসপাতালের রোগীরা চরম দুর্ভোগ পোহাবেন।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য প্রশাসক নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল্লাহ আল সাফি জানান, বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি ছাড়া আর কোনো চিকিৎসক নেই। অথচ ১৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা। তিনি দুঃখ করে বলেন, তীব্র চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দিনে দিনে শৌচাগারে পরিণত হচ্ছে।
সিভিল সার্জন ডা. মো. মুখলেছুর রহমান জানান, নিকলীতে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নিতে অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে দু’জন চিকিৎসক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করা যায়, তারা কয়েক দিনের মধ্যে যোগদান করবেন। তখন অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে বলে আশা করা যায়।