কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা ।।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে রূপসী বাংলা এমসিএস লিমিটেড নামক এক মাল্টিপারপাস অসহায় দরিদ্র সদস্যদের ১৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে বৃহস্পতিবার শতাধিক সদস্য উপজেলা পরিষদের সামনে দিনভর অবস্থান নেয়। তাদের বেশিরভাগই দিনমজুর, ভিক্ষুক ও মানুষের বাড়িতে (বুয়া) কাজ করেন। ভিক্ষুকের ৩ হাজার ৬শত টাকা থেকে শুরু করে অন্যদের ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় ও আমানত আছে এমন শতাধিক সদস্য রয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছুটিতে থাকায় সহকারী কমিশনার ভূমি গোলাম জাকারিয়ার কাছে তাদের অভিযোগ পেশ করেন।
জানা যায়, রূপসী বাংলা এমসিএস লিমিটেড কটিয়াদী উপজেলা সমবায় অফিস থেকে ২০১০ সালে নিবন্ধন নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। নিবন্ধন নং ২৯১/১০। কার্যক্রম প্রসারের জন্য স্থানীয় তিনজন মহিলাকে মাঠকর্মী হিসাবে নিয়োগ দেয় এবং এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান বুঝিয়ে গ্রাহক সংগ্রহের জন্য মাঠে কাজ করতে বলে। বিনিময়ে মাঠকর্মীদেরও প্রচুর মুনাফার আশ্বাস দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি রবিউল আওয়াল টমাস, পিতা ছিফত মাস্টার, গ্রাম কটিয়াদী পশ্চিমপাড়া উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। তিনি মসূয়া ইউনিয়নের সায়েদা খাতুন মিতু, জুয়েনা আক্তার ডালিয়া এবং ইয়াসমিন নামের তিনজন মহিলাকে মাঠকর্মী হিসাবে নিয়োগ দেন। তাদেরকে একটু পরিশ্রম করলে ভাল মুনাফা পাওয়া যাবে এমন প্রলোভন দেখালে তারা গ্রামের সহজ সরল মানুষকে উক্ত মাল্টিপারপাসের সদস্য করতে দিন-রাত পরিশ্রম করেন। এক বছরের মধ্যে তারা শতাধিক সদস্য সংগ্রহ করে নেন।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি রবিউল আওয়াল সদস্যদেরকে নানা রকম প্রলোভন দিয়ে তাদের নিকট থেকে সঞ্চয় ও আমানত সংগ্রহ শুরু করে। মেয়াদান্তে দীর্ঘ দিনের সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলন করতে গেলেই দেখা দেয় বিপত্তি। একেক দিন একেক রকম অজুহাতে তাদেরকে টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করে আসছে। এভাবে প্রায় ৭-৮ মাস যাবত সদস্যরা ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদেরকে টাকা-পয়সা চাইলে নানা রকম ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। ইদানিং তাকে অফিসে বা এলাকায় দেখা যায় না। গা-ঢাকা দিয়েছে। অপারগ হয়ে সদস্যরা এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দ্বারস্ত হয়।
মাল্টিপারপাসের একজন সদস্য জেসমিন বলেন, আমার স্বামী প্রবাসী। বিদেশ থেকে উপার্জিত টাকা ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করি। ডাকঘরের চেয়ে মাল্টিপারপাসে লাভ বেশি। এখানে প্রতি মাসে প্রতি লাখে ১হাজার ৪শত টাকা দেয়া হবে। এমন প্রলোভনে স্বামীর অনুমতি ছাড়াই ডাকঘর থেকে টাকা উত্তোলন করে পর্যায়ক্রমে ৬লক্ষ টাকা রূপসী মাল্টিপারপাসে বিনিয়োগ করি। বিনিয়োগের বিপরীতে রূপসী বাংলা এম.সি.এস লিমিটেডের ১০০টাকা মূল্য মানের কিছু সার্টিফিকেট প্রদান করে। এখন লাভ তো দূরের কথা আমার আসল টাকাও ফেরত পাচ্ছি না। এমন পরিস্থিতিতে আমার সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে। চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া হারাম হয়ে পড়েছে।
একজন সদস্য আয়েশা ছিদ্দিক (৬৫)। পেশায় ভিক্ষুক। তিনি বলেন, আমার ভিক্ষের টাহা (টাকা) জমায়ে মাসে মাসে তাগো অফিসে জমা দিছি। ৩হাজার ৬শত টাকা অইছে (জমা হয়েছে)। অনেক লাভ দিব কইয়া আমার আসল টাহাও ফেরত দেয় না।
কটিয়াদী পৌরসভার কাউন্সিলর জায়নাল আবেদীন বলেন, একটি প্রতারকচক্র গরিব মানুষকে নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে পড়েছে। তাদেরকে এখন আর অফিসে পাওয়া যায় না। সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম জাকারিয়া বলেন, অভিযুক্ত মাল্টিপারপাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে সমবায় অফিসের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।