আরিফ আহসান ।।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে খাঁচায় মাছ চাষ নতুন আঙ্গিকে শুরু হলেও বিশ্ব অ্যাকুয়াকালচারে খাঁচায় মাছ চাষের ইতিহাস অনেক দিনের। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার কারণে আধুনিক কালে খাঁচায় মাছ চাষ ক্রমাগতভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন ধরনের জলাশয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ উপযোগী আকারের খাঁচা স্থাপন করে অধিক ঘনত্বে বাণিজ্যিকভাবে মাছ উৎপাদনের প্রযুক্তিই হলো খাঁচায় মাছ চাষ। বাংলাদেশে ‘খাঁচায় মাছ চাষ’ নতুন হলেও এশিয়ার কিছু দেশ যেমন চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম এবং নেপালে এর প্রচলন বেশ প্রাচীন। এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ খাঁচায় মাছ চাষের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে খাঁচায় মাছ চাষে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। এদের অধিকাংশই খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ করে মূলত: আন্তর্জাতিক রফতানি বাণিজ্যের জন্য।
এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ হলো তাইওয়ান। সে দেশে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া খাঁচায় মজুদ করে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া উৎপাদন করে, ফিলেট আকারে রফতানি করা হয়। দেশটি উচ্চ গুণগত মানের তেলাপিয়ার ফিলেট রফতানিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। তাইওয়ান ২০০৬ সালে ২০,০০০ মেট্রিক টন ফ্রোজেন তেলাপিয়া এবং ৩১০০ মেট্রিক টন তেলাপিয়ার ফিলেট রফতানি করেছে।
চীনে খাঁচায় মাছ চাষ বেশ জনপ্রিয়। ছোট খাঁচায় অধিক ঘনত্বে মাছ চাষের প্রচলন চীনেই প্রথম শুরু হয়। সম্পুরক খাবার প্রয়োগের মাধ্যমে খাঁচায় তেলাপিয়া ও কমন কার্পের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়। ছোট ছোট খাঁচায় কমন কার্প অথবা তেলাপিয়া চাষ করা হচ্ছে। ২০০৬ সালে চীন শুধু আমেরিকাতে ৬৩ হাজার মেট্রিক টন তেলপিয়ার ফিলেট এবং ৪০ হাজার মেট্রিক টন ফ্রোজেন তেলাপিয়া রফতানি করেছে। সম্প্রতি জিম্বাবুয়েও ইউরোপের বাজারে তাজা ও ফ্রোজেন তেলাপিয়ার ফিলেট রফতানি শুরু করেছে। থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে খুব সাধারণ জাল দিয়ে তৈরি খাঁচায় কোরাল বা ভেটকী মাছের চাষ করা হয় এক বছর মেয়াদের জন্য। সমুদ্র থেকে আহরিত ছোট মাছ খাঁচাতে মাছের খাদ্য হিসেবে দেয়া হয়।
ভিয়েতনামে স্রোতশীল নদীতে খাঁচায় জলজ আগাছা সরবরাহ করে গ্রাস কার্প ও তেলাপিয়া চাষ করা হয়। এ ব্যবস্থাপনায় তেলাপিয়া মাছ গ্রাস কার্পের বর্জ্য মল খেয়ে থাকে। এক কেজি ওজনের মাছ উৎপাদন করতে ৩৫-৪০ কেজি সবুজ উদ্ভিদের প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে ৩৫ ঘনমিটারের খাঁচা থেকে প্রতি বছর ১.৫- ২.৫ মেট্রিক টন পর্যন্ত মাছের উৎপাদন হচ্ছে। এ সকল খাঁচায় বড় সাইজের (৫-৬ ইঞ্চি) পোনা মজুদ করা হয়। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে সবুজ উদ্ভিদের প্রয়োজন হয় বলে চাষিদের ব্যাপক শ্রম দিতে হয়।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে আমাদের দেশে খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ নেয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে থাইল্যান্ডের প্রযুক্তি অনুকরণে খাঁচায় মাছ চাষ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০০২ সাল থেকে শুরু করে মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে বর্তমানে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদী ও লক্ষীপুর জেলায় মেঘনা নদীর রহমতখালী চ্যানেলে যথাক্রমে সাড়ে চারশত এবং পাঁচশত খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া করা হচ্ছে; যা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে বছরে ৭০০ মেঃ টন রফতানিযোগ্য তেলাপিয়া। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার সাথে খাঁচায় মাছ চাষের এ অধ্যায় শুরু হয় চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে। এজন্য এখানকার ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন মডেলকে “ডাকাতিয়া মডেল” নামে অভিহিত করা হয়। তবে পাবনাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও খাঁচায় মাছ চাষ করা হচ্ছে।
খাঁচা স্থাপনে পরিবেশগত বিবেচ্য
খাঁচা নদীর এমন অংশে স্থাপন করতে হবে যাতে কোনক্রমেই নৌ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে। খাঁচা স্থাপনের স্থান এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। মাছ চুরি হওয়ার সম্ভাবনা যেন না থাকে। সামাজিক শত্রুতার বশবর্তী হয়ে কেউ খাঁচার জাল কেটে না দেয়। প্রতিকুল আবহাওয়া যেমন বন্যা, জলোচ্ছাস, নিম্নচাপ ইত্যাদি যাতে খাঁচা স্থাপনাকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে। স্থানটির পাড়ের অংশ কিছুটা উঁচু হওয়া ভালো যাতে প্রতিকূল বায়ুপ্রবাহ স্থাপনাকে আঘাত না করে। শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য নি:সৃত হয়ে নদীর পানিকে কলুষিত করে এ ধরনের অঞ্চল পরিহার করতে হবে।
খাঁচায় চাষ উপযোগী মৎস্য প্রজাতি
খাঁচায় মাছ চাষ স্বাভাবিক জলাশয়ে বা পুকুরে মাছ চাষের চেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ। এখানে পুকুরের চেয়ে অনেক বেশি ঘনত্বে পোনা মজুদ করা হয়। খাঁচার মাছ শুধুমাত্র বাহির থেকে সরবরাহকৃত সম্পূরক খাদ্যের উপর নির্ভরশীল, তাই পুকুরের ন্যায় বিস্তৃত পরিবেশে প্রাকৃতিক খাদ্যের জন্য বিচরণ করতে পারে না। আর আবদ্ধ পরিবেশে থাকার কারণে আক্রমণাত্মক স্বভাবের কোন মাছ থাকলে তার আক্রমণ থেকে রার জন্য দূর্বল মাছ কোন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে না। আবার ব্যবস্থাপনার অংশ হিসাবে প্রতিনিয়ত মাছগুলো নাড়াচাড়া করে স্থানান্তর করতে হয়। এ ধরনের ব্যবস্থাপনার পীড়ন সহ্য মতা না থাকলে মাছ মারা যেতে পারে। পানির স্বাভাবিক পরিবর্তণ কোন কারণে ব্যাহত হলে কিংবা তলার বর্জ্য পদার্থের প্রত্যাশিত অপসারণ না হলে খাঁচার পরিবেশ প্রতিকূল হয়ে যেতে পারে। ইত্যকার বিষয়গুলো বিবেচনা করেই বিভিন্ন দেশে নিজ নিজ ভৌগলিকভাবে সহজলভ্য প্রজাতির মাছই খাঁচার জন্য নির্বাচন করা হয়। সাধারণভাবে খাঁচার চাষের জন্য মৎস্য প্রজাতিগুলোর কিছু বৈশিষ্ট বিবেচনা করা হয়- নিজস্ব পরিবেশগত অবস্থায় স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনায় যাদের দৈহিক বৃদ্ধির হার ভাল। অধিক ঘনত্বে বসবাস উপযোগী। যে মাছের পোনা সবসময়ই সহজলভ্য যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী। সম্পূরক খাদ্যে সাড়া দেবার প্রবণতা ভাল। নদীর প্রবাহমান পানির খাঁচায় লাফানোর প্রবণতা কম। তুলনামূলকভাবে দৈহিক পীড়ণ সহ্য করার মতা বেশি। স্থানীয় বাজারে ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও মূল্য বেশি। বৈশিষ্টাবলী বিবেচনায় এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে খাঁচায় চাষের প্রজাতি হিসাবে এসব মাছকে নির্বাচন করা হয়- তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, কৈ, শিং, মাগুর, গ্রাস কার্প, কমন কার্প, শোল, চিংড়ি, স্বরপুটি, মার্বেল গোবী ও গোরামী।
পূর্বে আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে খাঁচায় মাছ চাষের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়েছে। শুরুর দিকে অনেকে খাঁচায় পাঙ্গাস মজুদ করতেন। কিন্তু ক্রমহ্রাসমান বাজার মূল্যের কারণে আজকাল খাঁচায় পাঙ্গাস চাষ লাভজনক বলে মনে হয় না। বর্তমানে অধিকাংশ খাঁচাতেই একক প্রজাতি হিসাবে মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাষ করা হচ্ছে। এর কারণ হলো নার্সিং করে খাঁচায় মজুদ করা হলে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানেই খাঁচা থেকে মাছ আহরণ ও বিক্রয় করা যায়; আর ক্রমবর্ধমাণ চাহিদা অনুসারে দেশেই মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে বিভিন্ন হ্যাচারীতে। এর সাথে সাথে আরো কিছু প্রজাতির মাছের পোনা খাঁচায় মজুদ করে উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যেই লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের বিভিন্ন খাঁচায় সীমিত মাত্রায় থাই স্বরপুটি, থাই কৈ, কমন কার্প, চিংড়ি ইত্যাদি মজুদ করা হয়েছে পরীামূলকভাবে। আমাদের দেশী কৈ, শোল, শিং মাগুর মাছও খাঁচায় চাষ করা সম্ভব; তবে এ সকল মাছের পোনা প্রাপ্তিই প্রধান প্রতিবন্ধক বলে মনে হয়। পোনা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে ও উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার সহজলভ্য হলে ব্যাপকভাবে খাঁচায় এসকল প্রজাতির মাছ চাষ সম্ভব হবে।
খাঁচায় চাষ উপযোগী আমাদের দেশের মৎস্য প্রজাতি হলো- তেলাপিয়া, থাই সরপুঁটি, গ্রাস কার্প, কমন কার্প, শৈল, কৈ, শিং ও মাগুর।
মাছ আহরণ ও বাজারজাত পদ্ধতি
মাছ বাজারজাতকরণের আগের দিন বিভিন্ন খাঁচা হতে বাজারজাত উপযোগী আকারের মাছকে বাছাইয়ের মাধ্যমে বাজারজাতের জন্য স্থাপিত ভিন্ন খাঁচায় মজুদ করা হয়। যে মাছগুলোকে নির্ধারিত দিনে বাজারে প্রেরণ করা হবে সেগুলোকে আগের দিন দুপুরের পর আর কোন খাদ্য প্রদান করা হয় না। ফলে বাজারজাতকরণের পর মাছ মারা গেলেও মাছের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ও গুণগুত মান অধিক সময় পর্যন্ত অূন্ন। নিকটতম বাজারে উপযোগী পাত্র বা ড্রামে পানিতে পরিমিত সংখ্যায় জীবন্ত সরবরাহ করা হয় অথবা দূরবর্তী বাজারে বরফ দ্বারা সংরণ করে পাঠানো যায়। আর ধৃত মাছ নিকটবর্তী পাইকারী বাজারে সঠিক সময়ে ঝুড়িতে করে তাড়াতাড়ি পৌছানো হয়।
খাঁচা হতে সাধারণত বড় আকারের মাছ বাজারজাত করা হয়। তাই এসব মাছের বাজারমূল্য বেশী হয়। কিন্তু এ মাছগুলো খাঁচার পাশেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করলে অনেক সময়ই ভাল দাম পাওয়া যায় না। খাঁচায় চাষকৃত মাছ ভাল দামে বিক্রির জন্য কিছু পদপেক্ষ গ্রহণ করা যেতে পারে- দলীয়ভাবে একত্রে খাঁচায় উৎপাদিত মাছ বিক্রি করা। জীবন্ত অবস্থায় মাছ বিক্রি করা। বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময় যখন চাহিদা বেশি ও সরবরাহ কম থাকে সে সময়ে মাছ বিক্রি করা। মধ্য স্বত:ভোগীদের কাছে বিক্রি না করে নিজেই খুচরা বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা।
খাঁচায় মাছ চাষ মূলত উন্মুক্ত বা বদ্ধ জলাশয় ব্যবস্থাপনার একটি কৌশল। আমাদের দেশের সামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থা বিবেচনা করে দেশের কোথাও কোথাও চাষীরা পুকুরেও এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। খাঁচায় মাছের উৎপাদন কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না বরং অনেকগুলো বিষয়কে বিবেচনায় রেখে উৎপাদন পরিকল্পনা করতে হয়। উৎপাদন পরিকল্পনা ও খাঁচা ব্যবস্থাপনার ওপরেই এর সফলতা নির্ভর করে। ডাকাতিয়া মডেলে খাঁচায় তেলাপিয়া চাষের ফলাফলের ভিত্তিতে খাঁচা স্থাপনা ব্যয়, উৎপাদন ব্যয় এবং একটি উৎপাদন চক্রে উৎপাদনের আনুমানিক চিত্র হলো :
১০টি খাঁচার (৬ মিটার ঢ ৩ মিটার X ১.৫ মিটার) সার্বিক অর্থনীতি-
১. খাঁচা স্থাপনের স্থায়ী খরচ:
সর্বমোট উৎপাদন খরচ = ২,৭৭,৬৭৫.০০ টাকা
মাছের মৃত্যুহার : ৫% = ৫০০টি
মোট উৎপাদিত মাছ : ৯৫০০টি = ৪০০০ কেজি
মোট বিক্রয় : ৪০০০ কেজি X ১২০.০০ = ৪৮০০০০.০০ টাকা
নীট লাভ = বিক্রয় মূল্য – উৎপাদন খরচ = ৪৮০০০০.০০ – ২৭৭৬৭৫.০০ = ২০২৩২৫.০০ টাকা
মুনাফার হার : ৪২.১৫%
৬ মাসের ফসল হিসাবে খাঁচায় বছরে ২টি ফসল উৎপাদন করা যাবে। তাহলে ১ বছরে উৎপাদন খরচ ও আয় হবে নিম্নরূপ:
মোট উৎপাদন খরচ = ২৭৭৬৭৫.০০ X ২ = ৫৫৫২৫০.০০ টাকা
মোট বিক্রয় = ৪০০০ কেজি ঢ ১২০.০০ X ২ = ৯,৬০,০০০.০০ টাকা
নীট লাভ = ৯,৬০,০০০.০০ – ৫,৫৫,২৫০.০০ = ৪০৪৭৫০.০০ টাকা
খাঁচায় মাছ চাষে সুবিধা
ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করলে পুকুরের ন্যায় জলাশয়ের প্রয়োজন হয় না। প্রবাহমান নদীর পানিকে যথাযথ ব্যবহার করে মাছ উৎপাদন বাড়ানো যায়। মাছের বর্জ্য প্রবাহমান পানির সাথে অপসারিত হয় বিধায় পানিকে দূষিত করতে পারে না। মাছের উচ্ছিষ্ট খাদ্য খেয়ে নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজাতির প্রাচুর্য্য বৃদ্ধি পায়। প্রবাহমান থাকায় প্রতিনিয়ত খাঁচার অভ্যন্তরের পানি পরিবর্তন হতে থাকে ফলে পুকুরের চেয়ে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়।
আমাদের দেশে প্রচুর উপযোগী নদী, বিল, হাওর, বাঁওড় ইত্যাদি রয়েছে। সারা বছর খাঁচায় মাছ চাষ করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশে এবং বিদেশেও তেলাপিয়া মাছের প্রচুর চাহিদা আছে। আমাদের দেশের নদী কিনারায় বসবাসরত জনগণ বিশেষ করে দরিদ্র জেলেগোষ্ঠি শুধুমাত্র নদী থেকে প্রাকৃতিক মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এসব মৎসজীবীকে সংগঠিত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব, সেই সাথে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজাতিগুলোর প্রজনন মৌসুমে তাদের নিবৃত্ত করে নদীর প্রাকৃতিক মাছের মজুদ বাড়ানো ও বিভিন্ন মাছের প্রজাতি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এশিয়ার অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও খাঁচায় উৎপাদিত মানসম্পন্ন তেলাপিয়া রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক তেলাপিয়া বাজারে প্রবেশের জন্য নীতিনির্ধারণী মহলসহ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের নদী, বিল, হাওর, বাঁওড় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উপজেলা মৎস্য অফিস এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি এলাকার সচেতন নাগরিকগণও জনগণের মাছের প্রয়োজন ও আর্থিক বিবেচনায় খাঁচায় মাছ চাষে এগিয়ে আসতে পারেন। এই ধরনের প্রকল্প ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশাল সম্ভাবনা তৈরির পাশাপাশি এটাকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে গতিশীলতাও বাড়বে। অন্যদিকে বাড়তি মাছ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব।
আরিফ আহসান : নির্বাহী সম্পাদক, পাক্ষিক অর্থজগত