বিশেষ প্রতিনিধি ।।
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীতে দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্রের অভাবে স্থানীয় বাজারে নামমাত্র মূলে বিক্রয়ে বাধ্য হচ্ছে খামারি ও কৃষকরা। দিনের পর দিন লোকসানে বিপ্লব সম্ভাবনাময়ী উপজেলাটিতে দুগ্ধশিল্প হুমকিতে পড়েছে।
আজ সোমবার (২ জুলাই ২০১৮) নিকলী উপজেলা সদরের নতুন বাজার, পুরান বাজারসহ একাধিক দুধ মহাল ঘুরে দেখা যায়, ৫০-১শ’ জন বিক্রেতা দুধ নিয়ে বসেছে। প্রত্যেকের পাত্রেই ৫-৪০ লিটার ধারণক্ষমতার দুগ্ধ পাত্র। সবাই উৎপাদনকারী। ক্রেতা দেখামাত্রই হৈ হৈ এগিয়ে যাচ্ছেন দুধ মেপে দিতে।
জানা গেল, স্থানীয় চাহিদার মাত্রাতিরিক্ত উৎপাদনের কারণেই এই চিত্র। স্থানীয় ক্রেতারাও সুযোগ নিতে ছাড়ছে না। লিটারপ্রতি ৩০-৩৫ টাকার মধ্যেই কিনতে পারছেন তারা। কয়েকজন বহিরাগত পাইকারকে দেখা গেল বাজারদরেরও কমে দুধ ক্রয়ের অপেক্ষার প্রহর গুনতে।
কিশোরগঞ্জ সদরের কর্শা কড়িয়াইল গ্রাম থেকে আসা পাইকার হাসান আলী জানান, এখান থেকে দুধ কিনে আমি শহরে বিক্রি করি। প্রতিদিন ৩০-৪০ লিটার দুধ সাইকেলে করে নিয়ে যেতে পারি। ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করে হাজার টাকা থাকে। কটিয়াদীর সোলেমান মিয়ারও একই বক্তব্য। তিনি তার এলাকায় মাসোহারা ভিত্তিতে গ্রাহকদের দুধ সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, আমাদের সামান্য পুঁজি। নিজের সাইকেলে যতটা পারি বহন করি। এখানে যে দর আর আমার এলাকায় যে চাহিদা, একটা বড় গাড়ি দিয়ে নিতে পারলে ধনী হয়ে যেতে পারতাম।
নিকলী উপজেলা সদরের প্রান্তিক দুধ উৎপাদক আলী হোসেন জানান, গরু কেনার পুঁজির লাভ, ভুষি, ফিড ইত্যাদি খরচসহ শ্রমমূল্য হিসাব করলে লোকসানই। কিছু না করার চেয়ে গাভীটিকে ভর করে কোনোরকম চলছি আরকি! তিনি আরও জানান, যদি শহর-বন্দরের মতো দর পাওয়া যেতো তবে দুধ উৎপাদনে আমরা বেশি উৎসাহি হতাম।
নাগারছিহাটির জাফরান মিয়া, গিয়াস উদ্দিনসহ একাধিক খামারির একই বক্তব্য। তারা জানান, দুধের বাজারে এমন নিম্নদর থাকায় লোকসান না গুনলেও লাভও দেখছেন না। পরিশ্রম আর পুঁজির ঝুঁকি কমাতে উৎপাদন কমানোর কথাই ভাবছেন এখন।
নিকলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবার জেলা শহরে থাকে। আমি নিজেই সেখানে ১শ’ দশ টাকা পর্যন্ত লিটার দরে দুধ কিনি। হাওর উপজেলাটিতে পর্যাপ্ত চারণভূমি গো পালনে বিশাল সম্ভাবনাময়। দিন দিন দুধ উৎপাদন বাড়ছেই। ব্র্যাক বা মিল্কভিটার মতো বড় কোন কোম্পানির ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন হলে দুধ উৎপাদনে এ উপজেলায় বিপ্লব ঘটানো যেতো।