নিখোঁজ এনজিওকর্মী ৩২ দিন পর গাজীপুরে গ্রেফতার, কর্তৃপক্ষের রহস্যময় ভূমিকা

farjana akter jemi

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

নিখোঁজের ৩২ দিন পর গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সোসাইটি ফর সোস্যাল সার্ভিস (এসএসএস) নিকলী শাখা অফিসের নারী মাঠ সংগঠক ফারজানা আক্তার জেমিকে (২৪) গাজীপুর ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় কোণাবাড়ির কাশিমপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে নিকলী থানা পুলিশের একটি দল। গ্রেফতার জেমি জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার কুশাইল গ্রামের এমএ জিন্নাহর মেয়ে। জেমি নিখোঁজের ঘটনায় সাধারণ ডায়রি, মামলায় উল্লেখিত তথ্য ও এসএসএস কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে জনমনে পাকাচ্ছে রহস্যের জট।

জানা যায়, গত ৬ অক্টোবর বিকাল ৪টায় এসএসএস অফিস থেকে পার্শ্ববর্তী কটিয়াদী উপজেলার ভূনা মহিলা সমিতিতে ঋণ ফরম পূরণের কথা মুভমেন্ট খাতায় উল্লেখ করে বের হন সংগঠনটির মাঠ সংগঠক ফারহানা আক্তার জেমি। অফিস থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের দুর্গম এবং তিন উপজেলার সীমান্তবর্তী অপরাধপ্রবণ এলাকা সত্ত্বেও বিকাল বেলায় ভূনা যেতে জেমির সাথে দেয়া হয়নি কোনো সহকর্মী। পরদিন ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত জেমির কোনো খোঁজ না পাওয়ায় জেমিকে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে সহকর্মীসহ এলাকাবাসী ধারণা করে।

farjana akter jemi

ওইদিন রাতে এসএসএস-এর নিকলী শাখার ব্যবস্থাপক মো. শামীম মিয়া নিকলী থানায় একটি নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়রি করেন। ডায়রিতে অর্থ আত্মসাত কোনো বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। এ সময় ও কয়েকদিন পর্যন্ত সাংবাদিকদের জেমির অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে না পারলেও জেমির পরিবারের কাছে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে মর্মে আদায়ের লিখিত নোটিশ পাঠায় বলে জেমির চাচা শ্যামল একটি জাতীয় দৈনিকের নিকলী প্রতিনিধিকে জানান।

শ্যামল ওই প্রতিনিধির কাছে আরো জানান, শাখা ব্যবস্থাপক শামীম মিয়ার নানাবিধ চাপের মুখে জেমি নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারে। বকেয়া কিস্তির টাকা পরিশোধে বাড়ি থেকে টাকা এনে ভর্তুকি দিতেও জেমিকে বাধ্য করতো শাখা ব্যবস্থাপক। শ্যামলের সাথে ওই সাংবাদিকের কথোপকথন যা মোবাইল রেকর্ডে সংরক্ষণ করা রয়েছে।

গত ২৪ অক্টোবর জেমি নিখোঁজের ১৮ দিন পর সংস্থাটির জোনাল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে জেমির নামে প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা আত্মসাতের একটি মামলা দায়ের করেন। যার নিকলী থানা মামলা নং- (১৯) ২৪/১১/১৬ ইং। মামলা হলেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানে না বলে ওই প্রতিনিধিকে আবারো জানান শাখা ব্যবস্থাপক।

মামলার ১৩ দিন পর মঙ্গলবার বিকালে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে এসআই শহিদুল্লাহর নেতৃত্বে গাজীপুর থেকে জেমিকে গ্রেফতার করে নিকলী থানা পুলিশ। নিয়ে আসার পথে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পথে একটি ফিলিং স্টেশনের টয়লেটে যায় জেমি। পুলিশ প্রহরায় টয়লেটে ঢুকে ফিরতে দেরি হওয়ায় সন্দেহ জাগে পুলিশের। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তাকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে একটি সূত্রে জানা যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেমি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মামলার বাদী ও সংস্থাটির জোনাল ম্যানেজার মোশারফ হোসেনের সাথে কথা বলতে ফোন দিলে তিনি ব্যস্ত আছেন এবং পরে ফোন দিবেন বলে তার এক সহকর্মী ফোন কেটে দেন।

নিকলী থানার ওসি মো. মুঈদ চৌধুরী জেমির গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করলেও আত্মহত্যার চেষ্টা ঘটনাটি সত্য নয় উল্লেখ করে জানান, জেমি অন্য কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। শিগগিরই থানায় আনা হচ্ছে।

Similar Posts

error: Content is protected !!