আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে।।
জেলার অখণ্ডতা রক্ষার দাবিতে ফের আন্দোলনমুখী কিশোরগঞ্জ। ২০ মার্চ প্রয়াত প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভৈরবকে জেলা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান।
তার এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় আসে ভৈরবকে জেলা করার প্রসঙ্গটি। ফলে পুরনো অথচ মীমাংসিত ইস্যুতে ফের প্রতিবাদমুখর কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলার মানুষই। বিক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা। জেলার অখণ্ডতা রক্ষার দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ কিশোরগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরাম এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে যেকোন মূল্যে জেলার অখণ্ডতা রক্ষা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক এনায়েত করিম অমি। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কিশোরগঞ্জ জেলাকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ভৈরবকে জেলা করার অপচেষ্টা এর আগেও হয়েছিল। তখন ওই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সারা জেলায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এক ভৈরব ছাড়া বাকি ১২ উপজেলার প্রায় সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রাস্তায় নেমে সরকারের আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিল। সাধারণ মানুষ ওই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছিল। জনমতের চাপে সরকারের নীতি নির্ধারকেরা তখন ভৈরবকে জেলা করার বিষয়ে আর অগ্রসর হননি। বিষয়টি মোটামুটি মীমাংসার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানও কিশোরগঞ্জবাসীর যৌক্তিক দাবির প্রতি সম্মান রেখে যতদিন বেঁচে ছিলেন, এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ বা কথা বলেননি। এরই মধ্যে কেটে গেছে আরও ৭টি বছর। এতদিন পর আবারও ওই মীমাংসিত বিষয়ে কথা বলে কিশোরগঞ্জবাসীকে কষ্ট দিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সময়-সুযোগ মতো ভৈরবকে জেলা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে পুরনো বিষয় নিয়ে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন। সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে এ ধরনের দায়িত্বহীন বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
লিখিত বক্তব্যে এনায়েত করিম অমি বলেন, আমরা কিশোরগঞ্জের মানুষ অখণ্ডতায় বিশ্বাস করি। কিশোরগঞ্জের মানচিত্র নতুনভাবে কাঁটাছেড়া করা হোক, তা আমরা চাই না। বহু বছর ধরে বর্তমান ভৌগলিক ও প্রশাসনিক বিন্যাস কিশোরগঞ্জবাসী নিজেদের জীবনে রপ্ত করে নিয়েছে। যা জেলার ১৩ উপজেলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে একটা ভারসাম্য তৈরি করেছে। যখন পুরো কিশোরগঞ্জকে নিয়ে আমরা আরও বড় স্বপ্ন দেখছিলাম, ঠিক তখন আবারও নতুনভাবে ভৈরবকে জেলা করার নামে কিশোরগঞ্জকে বিভক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। যা কিশোরগঞ্জকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমনকি মর্যাদার দিক থেকেও খাটো করার অপচেষ্টা। এ চেষ্টাও সফল হবে না। কিশোরগঞ্জের বীর জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে, এ চেষ্টাও রুখে দাঁড়াবে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, আমরা যেকোন মূল্যে কিশোরগঞ্জের অখণ্ডতাকে রক্ষা করব। কিশোরগঞ্জকে খণ্ডিত করে নতুন একটা জেলা বাস্তবায়ন কোনোভাবেই মেনে নেবে না জেলাবাসী। প্রয়োজনে কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য ফৌজিয়া জলিল ন্যান্সি, জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল মালেক চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ উইম্যান চেম্বারের সভাপতি ফাতেমা জোহরা, নারীনেত্রী বিলকিস বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম খান মাসুম, কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরামের আহ্বায়ক শফিক আদনান, সদস্য সচিব বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ কবি সংঘের সভাপতি বাঁধন রায়, সাহিত্যিক শহীদুল ইসলাম ফারুক প্রমুখসহ শহরের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : অখণ্ড কিশোরগঞ্জের দাবিতে ফের আন্দোলন (মানবজমিন)