ভাটির স্বাস্থ্যদূত ডা. মীর মতিউর রহমান আর নেই

নিজস্ব প্রতিনিধি ।।

জেলার মিঠামইন উপজেলার প্রত্যন্ত হাওর ইউনিয়ন কেওয়ারজোড়ের বাসিন্দা ডা. হাজী মীর মতিউর রহমান ওরফে মতি ডাক্তার (৯০) আর নেই। গত রোববার (২২ জুলাই ২০১৮) মধ্য রাতে নিজ বাড়িতে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।

জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত হাওর ইউনিয়ন কেওয়ারজোড়। ১০ গজ দূরের গ্রামে বর্ষায় যোগাযোগ বলতে নৌকার বিকল্প নেই। শুকনায় পায়ে হেঁটেই মাইলের পর মাইল পাড়ি দিতে হয়। শিক্ষা, চিকিৎসা বলতে আজকের সময়ে কল্পনারও বাইরে। সামান্য পেট ব্যথাতেও ঝাড়-ফুঁক ছাড়া উপায়হীন হাওর জনপদ। জটিল রোগ মানেই মৃত্যু। সেই সময়ে আধ্যাত্মিক সাধক মীর ইউসুফ আলীর ৮ পুত্রের বড়, ১ কন্যার ছোট মীর মতিউর রহমান তৎকালীন চিকিৎসা ক্ষেত্রের এমবিএইচ পাস করেন।

যুবক মীর মতিউর রহমান সুবিধাবঞ্চিত হাওরবাসির সেবায় আত্মোৎসর্গ করেন নিজেকে। শুকনা মৌসুমে দুর্গম হাওর পথে হেঁটে, বর্ষায় উন্মত্ত ঢেউ উপেক্ষা করে মাইলের পর মাইল ছুটে চলেছেন রোগীর বাড়ি। রোগী পরিবহনে নিজ উদ্যোগে চালু করেন বিশেষ নৌকা। ব্যক্তিসুবিধা গ্রহণের চেয়ে নেশায় পরিণত করেন অসহায়দের চিকিৎসা সেবাকেই।

নিজ এলাকা পেরিয়ে হাওর জনপদে তিনি হয়ে উঠেন “স্বাস্থ্যদূত” মতি ডাক্তার। ছিলেন সকল কুসংস্কারের সংস্কারকও। তাঁর উৎসাহ উদ্দীপনায় ভাইপো ভাস্কর ও গীতিকার বাদল, স্বপন, জাতীয় সংবাদপত্রকর্মী তোফায়েল, মোকাম্মেল, বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির কম্পিউটার প্রোগ্রামার আরিফসহ অসংখ্য শিল্প ও সাহিত্যকর্মীর পৃষ্ঠপোষক হয়েছেন।

সোমবার (২৩ জুলাই ২০১৮) দুপুরে এলাকার কাচারী বাজারে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয় কেওয়ারজোড় গ্রামের গোরস্থানে। ব্যক্তিগত জীবনে ৬ পুত্র আর ৩ কন্যার জনক এই অকুতোভয়, অল্পভাষী মানুষটির মৃত্যুতে হাওর এলাকায় বিরাজ করছে শোকের মাতম।

Similar Posts

error: Content is protected !!