মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা ।।
হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ সোনাইরকুল উদালিয়া ত্রিপুরা পল্লীতে আক্রান্ত ৩ জন রোগীকে সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বিআইটিআইডি ফৌজদারহাট হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং আক্রান্ত ত্রিপুরাপল্লী থেকে সোমবার নতুন করে আরো ৩ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হল মনি ত্রিপুরা (৯), সাগর ত্রিপুরা (৭), সাম ত্রিপুরা (৬)।
এদিকে দুর্গম ত্রিপুরাপল্লীতে ৪ জন শিশুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর ২৭ আগস্ট সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় আক্রান্ত ত্রিপুরাপল্লীতে ছুটে আসেন ইপিআই-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেজাউর রহমান খান। তিনি ঘুরে সবার সাথে কথা বলেন এবং সচেতনতাশূলক পরামর্শ দেন। আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। এসময় স্বাস্থ্য বিভাগের উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিদর্শকরাও ছুটে আসতে দেখা যায়। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি দেখে তোড়জোড় বেড়ে যায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের।
তারপর বিকাল পাঁচটায় চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান ছিদ্দিকিসহ ঢাকা থেকে আই.ই.ডি.সি.আর-এর প্রতিনিধি ডাঃ মুরাদুজ্জামান ও ডাঃ শাহ আলম এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডাঃ তানবীরুল ইসলাম ও ডাঃ আরিফুল ইসলাম সোমবার ত্রিপুরা পল্লীতে গিয়ে প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক ও নারী উন্নয়ন শক্তির সহযোগিতায় ত্রিপুরা পাড়ার অধিবাসীদের রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত নিয়ে গেছেন। ত্রিপুরা পাড়ায় এটা অজ্ঞাত রোগ নয়, এটা হাম রোগ বলে জানিয়েছেন মেডিকেল টিম ও সিভিল সার্জন।
সরেজমিনে এলাকায় এসে দেখা গেছে, ৫২ পরিবারের ৩৭০ জনের জন্য মোট তিনটি পানির নলকূপ থাকলেও এর মধ্যে তিনটি নলকূপই অকেজো। পার্শবর্তী এলাকা প্রায় দেড় কি.মি. ছড়া থেকে পানি এনে তারা পান ও ব্যবহার করে থাকেন। সোমবার স্থানীয় কিছু মুসলিম পরিবারের যুবকরা উক্ত এলাকায় এসে তিনটি অকেজো নলকূপ থেকে একটি সচল করে দেয়। এতে করে ত্রিপুরাবাসী আনন্দে যেন আত্মহারা হয়ে পড়ে। তাছাড়া এখানে স্বাস্থ্যসম্মত সৌচাগারের অভাব দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় আদিবাসী ফুলমতি ত্রিপুরা, শান্ত ত্রিপুরা, নিশিরং ত্রিপুরা ও ধনপতি ত্রিপুরা এদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজাতি পল্লীটি দুর্গম এলাকায় হওয়ায় তারা দূরে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সচেতনতার অভাবে টিকা ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে যায় না। আর দায়িত্বশীলরাও নির্ধারিত স্থান ছাড়া অবহেলিত এই এলাকায় গিয়ে টিকা দেয় না। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ এলাকায় প্রকট সমস্যা।
সচেতনতার অভাবে ত্রিপুরাপল্লী জনগোষ্ঠি সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। ধনমিয়া ত্রিপুরা জানান, শুধুমাত্র ভোটের সময় প্রার্থীরা এলাকায় আসে। ভোট শেষ হলে কেউ তাদের খবর রাখে না। অনেক পরিবারের সন্তানদের জন্মনিবন্ধন নেয়। সোনাই ত্রিপুরা পল্লী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের দূরত্ব ৬ কি.মি. হওয়ায় এবং যাতায়াতের কোন ধরনের যানবাহন না থাকায় আর্থিক কারণে তারা পরিষদে গিয়ে সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করাতে পারে না।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ও ঢাকা থেকে আই.ই.ডি.সি.আর-এর প্রতিনিধি দল এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদল জানান, ভয় কিংবা আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। এটা হাম রোগের ভাইরাস। যারা হামের টিকা নেননি তারা সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে ভয় পাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আগামী বৃহস্পতিবার ৬মাস থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত ৭০ জন শিশু-কিশোরের হামের টিকা দেয়া হবে বলে জানান।