সংবাদদাতা।।
১৯ অক্টোবর। একাত্তর সালের এই দিনে নিকলী থানা সদর শত্রুমুক্ত হয়। বিভিন্ন সংগঠনের নানান আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম উপজেলা সদরে বিকাল ৪টার আলোচনা সভা।
দিনভর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি গ্রুপের দফায় দফায় আক্রমণের মুখে রাজাকার ও পাক হানাদারদের অনুগত বাহিনী টিকতে না পেরে রাতে তারা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন মুক্তিযোদ্ধার সহযোগী ও একজন গ্রামবাসীকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদ্বয় হলেন নিকলী পূর্বগ্রামের আব্দুল মালেক মালু, গুরই গ্রামের মতিউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধার সহযোগী হলেন নিকলী পূর্বগ্রামের নান্টু মিয়া এবং গ্রামবাসী হলেন ষাইটধার গ্রামের মেঘু মিয়া। তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকার বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নিকলী থানা সদরে পাক সেনাদের আগমন ঘটে ২১ আগস্ট এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মুহূর্মুহূ আক্রমণের মুখে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তারা নিকলী ত্যাগ করে কিশোরগঞ্জে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তবে নিকলী গোড়াচাঁদ হাইস্কুলে রাজাকারদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। অন্যদিকে নিকলী থানা ভবনে স্থাপিত হয়েছিল ইয়াহিয়ার অনুগত পুলিশ ও আনসার বাহিনীর আরো একটি শক্ত ঘাঁটি। ১৮ অক্টোবর রাতে মুক্তিযোদ্ধা রিয়াজুল ইসলাম খান বাচ্চুর নেতৃত্বে হাইস্কুলে অবস্থানরত রাজাকারদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। কিন্তু গোলাবারুদের শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধারা ওই রাতে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। এর পরদিন ১৯ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ৪টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজাকারদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে গুলি শুরু করে। ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নিকলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন প্লাটুন কমান্ডার মোজাম্মেল হক আবীর স্মৃতিচারণ করে বলেন, সন্ধ্যার পর পর্যন্ত যুদ্ধ চলছিল। বিকালের দিকে নিকলী পশ্চিমগ্রাম কবরস্থানের কাছে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের দলে থাকা আব্দুল মালেক মালু, মতিউর রহমান ও নান্টু মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। আবদুল মালেক ঘটনাস্থলেই শহীদ হন এবং আহত অবস্থায় মতিউর রহমান ও নান্টু মিয়াকে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার পর চিকিৎসার অভাবে তারা প্রাণ হারান। মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ আব্দুল মালেক মালুর লাশ গুরই কবরস্থানে দাফন করেন। মেঘু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে তার গ্রামেই প্রাণ হারান। অবশেষে রাজাকারের দল ৪৫টি ৩০৩ রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ ফেলে রেখে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। নিকলী শত্রুমুক্ত হয়। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে নিকলীর আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়। ঘরে ঘরে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
নিকলী মুক্ত দিবস পালিত
