দেশে দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিভিন্ন পদ্ধতি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বোচ্চ বিচারিক সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে সবদেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতি একরকম নয়। সারাবিশ্বে এখন প্রধানত নয়টি উপায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে দড়িতে ঝুলিয়ে ফাঁসি, লেথাল ইনজেকশন, ফায়ারিং স্কোয়াড, ফায়ারিং, শিরশ্ছেদ, বৈদ্যুতিক চেয়ার, গ্যাস চেম্বার,পাথর ছোড়া, উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দেয়া।

ইনজেকশন
অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য সোডিয়াম পেন্টোনাল, সম্পূর্ণ অক্ষম করার জন্য প্যানকিউরোনিয়াম ব্রোমাইড আর হৃদযন্ত্র থামিয়ে দেয়ার জন্য পটাশিয়াম ক্লোরাইড নামের তিনটি রাসায়নিক উপাদান ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়ে অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভিয়েতনামে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়৷

ফায়ারিং স্কোয়াড
আসামিকে একটি ঘরের মধ্যে একটি চেয়ারে বসানো হয়। হাত পা মুখ বাঁধা অবস্থায় থাকে। তার থেকে ২০ ফুট দূরে একটা দেয়াল থাকে যাতে ফাঁকা জায়গা করা থাকে। এখান থেকেই গুলি করা হয়। পরপর পাঁচ বার গুলি করা হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পুরনো পদ্ধতি।
পাঁচটি রাইফেলের চারটিতে তাজা গুলি একটিতে ফাঁকা গুলি থাকে। অর্থাৎ নিহত ব্যক্তি চারটি গুলির আঘাতে মারা যায়। অন্যদিকে পাঁচজন শুটারের মাঝে একজন শুটার তার হত্যাকারী নয়। কে হত্যাকারী ননয় তা নির্ণয় করাও সম্ভব নয়। ফলে সবাই দাবী করতে পারে নিহত ব্যক্তি অন্তত তার গুলিতে মারা যায়নি।

গুলি
ইন্দোনেশিয়া, চীন, সৌদি আরব, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া সহ কয়েকটি দেশে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে তাকে বসিয়ে বা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়৷ এরপর সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য একের পর এক গুলি করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন৷

বৈদ্যুতিক চেয়ার
এতে ওক কাঠের চেয়ার ব্যবহার করা হয় যাতে বিশেষ পদ্ধতিতে ইলেকট্রিক লাইন দেয়া থাকে। দন্ডিতকে সে চেয়ারে বসিয়ে হাত পা বুক ফিতা দিয়ে বাঁধা হয়। তার মাথায় মেটালিক হেলমেট পরানো হয়। ১০০০ থেকে ২৩০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়। প্রতিবার ৩০ সেকেন্ড করে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কয়েকবার এভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়৷ এই পদ্ধতিটা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত৷

গ্যাস চেম্বার
আবদ্ধ ঘরের মতো যাতে একটি চেয়ার ও একটি সিলিন্ডার থাকে। সিলিন্ডারে সায়ানাইডের বড়ি থাকে এবং নীচে একটি পাত্রে সালফিউরিক এসিড থাকে। চেয়ারে বসিয়ে দন্ডিতের হাত পা বেঁধে দেয়া হয়। এবার বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে তিনটি বিস্ফোরন ঘটানো হয়। এতে সিলিন্ডারের সায়ানাইড, সালফিউরিক এসিডে পড়ে। মুহুর্তেই বিষাক্ত গ্যাস তৈরী হয়, যা মানুষকে কিছুক্ষনের মধ্যে অচেতন করে ফেলে। খিঁচুনি শুরু হয় এবং মৃত্যু ঘটে। আসামীর মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর সেই চেম্বার বিষাক্ত গ্যাস মুক্ত করা হয়। ৩০ মিনিট পর সেই চেম্বার খুলে মৃত দেহ বের করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ,মিসৌরী ও আ্যারিজোনায় এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

দড়িতে ঝুলিয়ে ফাঁসি
বাংলাদেশ সহ আফগানিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, জাপান, মালয়েশিয়া ও কুয়েতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রচলন রয়েছে৷

শিরশ্ছেদ
কয়েক হাজার বছর ধরেই শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতি প্রচলিত আছে৷ তবে বর্তমানে শুধু সৌদি আরবে এই পদ্ধতিটি চালু রয়েছে৷ সাধারণত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গনে ধরাল অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হয়। এই পদ্ধতিতে একবারে মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়।

পাথর ছুড়ে মারা
মাটিতে পুতে বা কোন কিছুর সঙ্গে বেধে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরেরও চল আছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরানে এই পদ্ধতি আংশিকভাবে চালু আছে।

অন্যান্য উপায়
অনেক উঁচু থেকে অভিযুক্তকে নিচে ফেলে দেয়ার মাধ্যমেও কোথাও কোথাও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ইরানে এই পদ্ধতির কথা শোনা যায়। আবার সুদানে কাউকে যে ভাবে হত্যা করা হয়েছে অভিযুক্তকেও একই ভাবে হত্যা করা হয়।

মৃত্যদণ্ড কার্যকরে বাংলাদেশ ফাঁসি পদ্ধতি ব্যবহার করে। আর যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ যা ফায়ারিং স্কোয়াড, ইলেট্রিক চেয়ার , গ্যাস চেম্বার-এই তিন পদ্ধতিই ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ টি স্টেটের ৩২ টিতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

সংগৃহীত

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!