সিংপুরের এই গ্রামে পাঠদানে নেই কোনো প্রতিষ্ঠান!

মোঃ হেলাল উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার চরম দুর্গম প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চল, ধনু নদীর তীরে গড়ে ওঠা সিংপুর ইউনিয়নের প্রাচীনতম কাশিপুর গ্রাম। এ গ্রামের চারপাশে এখন বর্ষার পানিতে থৈ থৈ করছে। বর্ষার মৌসুম তারা পানিবন্দী জীবনযাপন করে থাকেন। গ্রাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদ ৫ এবং উপজেলা পরিষদের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এখানকার মানুষেরা ঘর থেকে বের হলেই নৌকা খুঁজতে হয়। এ ছাড়া কোথাও যেতে পারেন না।

সারাবছর তাদের বাড়ির ঘাটে ডিঙি নৌকা বেঁধে রাখতে হয়। এলাকার বয়োবৃদ্ধ লোকদের কাছে গ্রামের বসতি স্থাপন কত সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছে? এ নিয়ে কথা হলে মো: আব্দুল হেকিম, মমতাজ আলী, কদ্দুস, নুরে বেগম, হোসনা আক্তার জানান, গ্রামটি কত সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা বলা কঠিন। তবে শত বছর হতে পারে।

আশির দশকের দিকে পুরো গ্রামটি হাওরের ঢেউয়ের আঘাতে বসতবাড়ি ভেঙে যায় এবং বিলীন হয়ে যায়। গ্রামের চিহ্ন তখন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে লোকজন অন্যত্র আশ্রয় নেয়। ২০১৭ সালে সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামের সহযোগিতায় মাটি ভরাট করে দেয়া হয়। আবার সেখানে মানুষ ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করেছেন। দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। গ্রামে প্রায় ৬০টি পরিবার স্থায়ীভাবে বাস করে আসছে।

হাওরের বুকে যেন ভাসমান এক গ্রাম “কাশিপুর”

অদ্যাবধি কাশিপুরের গ্রামে স্থাপিত হয়নি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিদ্যালয়। গ্রামের লোকজনদের কৃষি এবং মাছ ধরার উপার্জিত অর্থে চলে এসব মানুষের জীবনের গাড়ি। এ গ্রামের দক্ষিণে ৪ কিলোমিটার দূরে ভাটি বরাটিয়া, উত্তরে ৩ কিলোমিটারের পথ ডুবি। শুকনা মৌসুমে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে। তবে বর্ষায় কোনো অবস্থাতেই স্কুলে যাওয়া-আসা করা শিশুদের পক্ষে সম্ভব হয় না। যদি আবহাওয়া অনুকুল হয় তবে নৌকা দিয়ে পাশের গ্রামের স্কুলে যেতে পারে, নতুবা বিদ্যালয়ে যাওয়া প্রায় বন্ধই থাকে।

গ্রামটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান বলতে একমাত্র একটি মসজিদ এবং মক্তব রয়েছে। নেই শিশুদের পড়ালেখার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষা নিয়ে কথা হয় গ্রামের মানুষদের সাথে। তারা এ প্রতিনিধিকে জানান, হাওরের মধ্যে আমরা কাশিপুর, সুলতানপুর গ্রাম দু’টিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকার দরুন আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দিতে পারছি না। দিন দিন আমাদের ছেলেমেয়েরা হচ্ছে শিক্ষাবঞ্চিত। আমাদের প্রজন্মকে শিক্ষিত সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হলে কাশিপুর গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। স্বাধীনতা উত্তর আমরা পালাবদলের সকল সরকারের কাছে নিবেদন করেছি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের। প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখেছি ছোট সোনামনিদের জন্য আলোকিত মাঠ। সে স্বপ্নের শেষ কোথায় জানি না। কাশিপুর গ্রামে একটি বিদ্যালয় বিনির্মাণের জন্য বর্তমান শিক্ষাবান্ধব এ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দৃষ্টি প্রত্যাশা করি।

নিকলী-বাজিতপুরের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চেষ্টা করা হলে মোবাইলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Similar Posts

error: Content is protected !!