হে কিশোরগঞ্জবাসী, নরসুন্দার কান্না শুনতে কি পাও?

অনুপম মাহমুদ ।।

ষোড়শ শতকের সংস্কৃতির রাজধানী, মাসনাদে আলা ঈশা-খাঁ, বাংলার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী, উপেন্দ্র-সুকুমার-সত্যজিতের স্মৃতি বিজড়িত, শত সংগ্রামের ঐতিহ্যের জনপদ কিশোরগঞ্জ গড়ে উঠেছে নরসুন্দার নরম পলি মাটি দিয়ে। তাই এই অঞ্চলের মানুষের মন কাদা মাটির মতোই নরম। কিশোরগঞ্জের এর বুক চিরে চিরচেনা নরসুন্দা নদী এখন অতীত। দুর্ভাগ্য আমাদের, কিন্তু এটাই এখন বাস্তব! যে নদী ছিলো এই শহরের প্রাণ, যে নদীতে ভাটির ঐতিহ্যবাহী ‘গৌইস্তা’ নৌকায় চড়ে আমার মায়ের প্রথম এই শহরে আগমন, যে নদীতে ভেসে বেড়াতো পাল তোলা নৌকা, মাঝি গাইতো দরাজ গলায় জলের গান, রাতের মিটিমিটি আলোয় মাছ ধরে বেড়াতো জেলেরা, আজ সেই নদী কালের অতল গহ্বরে…

ঝাঁকরা চুলের পথিক নবী একটা গান গেয়েছেন, গানের কথাগুলো এই রকমঃ ‘নদীর জল ছিলো না, কূল ছিলো না, ছিলো শুধুই ঢেউ… আমার একটা নদী ছিলো, জানলো না তো কেউ…’। প্রিয় পথিক, আমাদের নরসুন্দার জল, কূল, ঢেউ সব ছিলো, আর জেনে শুনে বুঝেই একে হত্যা করেছি আমরা সম্মিলিত ভাবে। প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর নিজের কল্পনায় একটা নদী ছিলো, ‘ময়ূরাক্ষী’। তিনিও লিখেচ্ছেন ‘নদীর নামটি ময়ূরাক্ষী, কাককালো তার জল, কোন ডুবুরি সেই নদীটির পায়নি খুঁজে তল। তুমি যাবে কি ময়ূরাক্ষীতে, হাতে হাত রেখে জলে নাওয়া… যে ভালোবাসার রঙ জ্বলে গেছে, সেই রঙটুকু খুঁজে পাওয়া। সখী ভালোবাসা কারে কয়… নদীর জলে ভালোবাসা খোঁজার কোন অর্থ কি হয়… ।’

মিসির আলী, রূপা, বাকের ভাই ও হিমুর শ্রষ্টা, আপনিও জেনে রাখুন, আমাদেরও একটা জলজ্যান্ত নদী ছিলো, নরসুন্দা… ছিলো বলছি এই জন্য যে, নরসুন্দাকে হত্যা করা হয়েছে অনেক আগেই। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের প্রাণের স্পন্দন নরসুন্দাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেছে। তাই বলা যায় সরকারি ভাবেই ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ইস্যু করা হয়েছে। শেষকৃত্য করে তার নাম দেয়া হয়েছে ‘লেক’!!! আশ্চর্য… একটা জলজ্যান্ত নদী কি ভাবে লেক হয়ে যায়?

যে নদী অন্য কারো সহায়তা ছাড়া নিজেই মূল উৎস থেকে জন্ম নেয় তাকেই বলে ‘নদ’ আবার নদের শাখা বা প্রশাখা থাকা না থাকাটা নির্ভর করে এর মূল স্রোতধারার গতি প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে। নদ আর নদীর কিছু পার্থক্য বিদ্যমান, যা আমরা অনেকেই জানি না। আবার সরলীকরণ করে অনেকেই বলে থাকি নদীর লিঙ্গান্তর। কেউ বলে যে নদীর নামের সাথে আকার আছে সেটা হলো নদী, যেমনঃ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা। আবার যার আকার নাই, যেমনঃ ব্রহ্মপুত্র, কপোতাক্ষ, শঙ্খ এগুলো নদ। তাহলে নরসুন্দাকে হতে হবে নদী! আসলে তা নয়, আমাদের নরসুন্দা ছিলো নদ।

হিমালয়ের কৈলাশ টিলার মানস সরোবর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের জন্ম। এখানে আমরা লক্ষ্য রাখি যে, মানস সরোবর ছিলো একটা জলাধার। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামের উলিপুর/রৌমারি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্র।

আসুন আগে জেনে নেই নদী, নদ, খাল ও লেক কাকে বলে?

নদী : এমন এক স্রোতধারাকে নদী বলা হবে যা সুউচ্চ কোনো পর্বত, হ্রদ, প্রস্রবণ বা বৃহৎ কোনো জলাধার কিংবা ঝর্ণা থেকে উৎপন্ন হয়ে নিজে অথবা অন্য কোনো শাখা নদী বা উপনদী সহায়তায় পরিশেষে সাগরে মিলে যাবে। যেমন : মেঘনা, যমুনা, কুশিয়ারা ইত্যাদি।

নদ : উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞা অনুযায়ী, যে নদী শাখা নদী সৃষ্টি করে না তাকে বলা হবে নদ। যেমন, ব্রহ্মপুত্র, কপোতাক্ষ, শঙ্খ কিংবা মিশরের নীল নদ।

খাল : এটা সাধারণত কৃত্রিমভাবে তৈরি এক জলের প্রবাহ, যা সাধারণত কৃষিকাজ বা নৌ চলাচল বা প্রধানত পানিপথে বাণিজ্য বা পণ্য পরিবহনের জন্য তৈরি করা হয়। এই খালগুলো আবার দু’টি জলাধারের সংযোগ হিসেবেও কাজ করে। যেমন সুয়েজ খাল। কিশোরগঞ্জের কাঁটা খাল, ইতিহাসের কিছু সূত্র বলছে, কিশোরগঞ্জের পুরান থানা থেকে নরসুন্দার যে শাখাটি রেল স্টেশনের পাশের মনিপুরী ঘাট হয়ে ধুলদিয়া পর্যন্ত গিয়েছে, সেই অংশটির পুরান থানা-মনিপুরী ঘাট অঞ্চলটিকে বলা হয় কাঁটা খাল।

বত্রিশের প্রামাণিক বাড়ির নন্দ কিশোর মহাশয়ের বাড়িতে একুশে রত্ন ভবন-এর উদ্বোধন ও মন্দিরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার সময় দূর-দূরান্ত থেকে আগত অতিথিদের আগমনের সুবিধার্থে এই খাল করা হয় বলে জনশ্রুতি আছে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, জঙ্গলবাড়ির দেওয়ানদের কাচারী ছিলো ধুলদিয়া, তাই ওখানে যাওয়া আসার সুবিধার জন্য এই কাঁটাখাল খনন করা হয়। মূলত কেটে খাল তৈরি করায় এর নাম কাঁটা খাল হয়ে থাকতে পারে বলেই মনে হচ্ছে।

লেক : বদ্ধ জলাশয়, যেখানে পানি জমে থাকে, প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট কোনো নদী বা জলাশয়ের সাথে সংযোগ থাকাটা জরুরি নয়। ঢাকার হাতির ঝিল, ধানমন্ডির লেক বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য লেক।

কেন এই নদের নাম নরসুন্দা : কিভাবে হলো এই নাম, প্রাচীন শ্রুতি অনুযায়ী, সুন্দা নামে একজন দাসী সেবার জন্য নিয়োজিত ছিলেন একজন কুলীন ব্রাহ্মণের। সেই ব্রাহ্মণ ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়েছিলেন পুণ্যস্নান করতে, হাতে ছিলো পদ্ম, দেবতার জন্য। সেই ব্রাহ্মণ যখন পদ্ম সমর্পণ করছিলেন, তখন তা ব্রহ্মপুত্র গ্রহণ না করে তার সেবায় নিয়োজিত দাসীর পায়ে সমর্পণ করেন।

এই দৃশ্য দেথে সেই ব্রাহ্মণ বুঝতে পারলেন এই দাসী সাধারণ কেউ নন, তখনই সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে দাসীর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবার জন্য এগিয়ে গেলেন, আর দাসী ভাবছিলেন, মনিব কেন আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন, তাই তিনি সরে যাচ্ছিলেন। এভাবে সেই সুন্দা দাসীর পেছন পেছন নর ছুটে যাচ্ছিলেন, আর তাদের পেছনে সৃষ্ট জলের প্রবাহকে নরসুন্দা বলা হয়।

পৃথিবীর প্রায় সব নদী বা স্থানের নামের পেছনেই এমন নানা লোক কাহিনী জড়িয়ে আছে। যার ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে ফেরাটা নিতান্তই সময়ের অপচয়।

নরসুন্দার পথ রোধ : একটা নদ চলবে তার আপন গতিতে, নিজের ইচ্ছে মতো। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করা যায়? আর যুদ্ধ করে যদি আপনি জয়লাভ করেও ফেলেন, তাতেই কি আম জনতার মঙ্গল? পরিবেশের কথা না হয় না-ই বললাম।

কৃত্রিম উপায়ে সুইমিংপুল বানানো গেলে, লেক বানানো নিশ্চয়ই যাবে, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা বলে কথা! তাই বলে তর্কের খাতিরে না হয় মেনেও নিলাম। তবে সেটা এতটাই ব্যয়বহুল হবে, যেটা বহন করার সামর্থ্য আমাদের আছে বলে মনে হয় না। যদি যথাযথভাবে পরিচর্যা করা না হয়, তবে এই বানানো লেক হবে ময়লা, আবর্জনার কটু, দূর্গন্ধময় ভাগাড়। তার ওপর শত বছরের পৌরসভা হলেও নেই আমাদের যথাযথ বা পরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। তাই বাসা বাড়ি থেকে শুরু করে সবাই তাদের ড্রেনেজ যুক্ত করে দিচ্ছেন নরসুন্দার পাঁজরে।

এতে আমাদের পরিবেশের বারোটা বাজতে আর দেরি হবে বলে মনে হয় না। আর হলেই বা কি? আমাদের নদ, লেক হতে যাবে কেন? গরিব বা অবহেলিত বলে কি আমাদের নরসুন্দার সম্মান নেই?

একটা নদী যে কতটা উপকারী সেটা স্বীকার করবেন সবাই। নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিলো প্রথম সভ্যতা। মিশরের নীল নদের তীরে চাষাবাদও শুরু হয়েছিলো এই নদের ওপর ভরসা করেই। বলাবাহুল্য যে, দুনিয়ার তাবৎ উন্নত দেশসমূহ, কৃষিকাজে বা খাবার পানির উৎস হিসেবে Surface Water বা ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহার করলেও আমরা বিশেষ করে গরিব ও অনুন্নত (যদিও আমরা উন্নতি করছি ধীরে ধীরে, বলা হয় আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ। উন্নত দেশ হলাম বলে…) দেশসমূহ ব্যাপক হারে ভূ-গর্ভের পানি উত্তোলন করছে।

এক ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে গোটা উত্তরাঞ্চল আজ শুষ্ক ভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রমত্তা পদ্মা নদী শুকিয়ে চৌচির… গোটা বরেন্দ্র এলাকায় চাষাবাদের জন্য ভরসা এখন ভূ-গর্ভের পানি। কিন্তু, আর কত? দিন দিন সেখানে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। আরেক দুঃসংবাদ, হচ্ছে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির আশেপাশের নয়টি গ্রামের বাড়িঘরে ফাটল ধরেছে আর নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ পানির স্তর সেখানেও নিম্নমুখী।

মাটির নিচের পানি হচ্ছে খনিজ সম্পদ, তাই উন্নত দেশগুলো তা মজুদ করে রাখছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আর আমরা করছি তার ঠিক উল্টো। আমাদের অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী দিয়ে যাবো?

আমাদের কিশোরগঞ্জ এক দিক থেকে সৌভাগ্যবান, আমরা হলাম ভাটির মানুষ, আমরা না চাইলেও পানি আমাদের কাছে আসবেই, কারণ পানি নাকি আবার সবসময় নিচের দিকেই নামে…। সেটা যদি অন্যভাবে বলি, শোষণ সব সময় দুর্বলের প্রতিই বেশি মাত্রায় হয়।

নদীতে পণ্য পরিবহনে সময় যা-ই লাগুক, খরচ হয় খুবই কম, আর শুধু ভাটি এলাকার জন্যই নয় নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্য এটা একটা প্রকৃতি প্রদত্ত আশীর্বাদ। কিন্তু আশির দশক থেকে এদেশে ব্রিজ কালভার্ট তৈরি করার সময় ব্যয় সংকোচনের নামে বেশ নিচু করে বানানো হচ্ছে। এতে শুকনো মৌসুমে তো দূরের কথা ভরা বর্ষাতেও নদীতে বা খালের ব্রিজ কালভার্টের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারে না।

এতে ব্যবসায়ীরা সড়ক পথে পণ্য আনা-নেয়া করতে বাধ্য হচ্ছে, আর বাড়ছে জাপান, চীন এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে গাড়ি আমদানি। মজার বিষয় হচ্ছে এদের কেউ কেউ স্বল্প সুদ, বিনা সুদ বা কখনো উপহারের নামে এই কালভার্টগুলো আমাদের বানিয়ে দিচ্ছে।

আমরা বাঙালিরা বিনামূল্যে পেলে আলকাতরাও নাকি, খাই। খাই কি না, এর পরেও কি বলতে হবে! আমরা উপহার গ্রহণ করতে গিয়ে নিজেদের কত বিপর্যয়ের মধ্যে টেনে নিচ্ছি?

তার ওপর কিশোরগঞ্জের কতিপয় প্রভাবশালী এই মৃত নদীকে দখল করে রেখেছে যুগের পর যুগ। জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে ২২০ জনকে চিহ্নিত করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে আবার অদ্ভুত সখ্য। সব দল ও মতের এমনকি ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে মিলেমিশে চেটে পুটে খাচ্ছে নরসুন্দার রুপ-রস।

এই কিছু বছর আগে আমার মা ভাটির লীলাভূমি নিকলীর দামপাড়া শ্বশুরবাড়ির ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে কিশোরগঞ্জের আখড়াবাজারে এসে নোঙ্গর ফেলেছিলেন। আর আমিও ১৯৯৬-৯৭ সাল অবধি স্টেশন রোডের পাশের সিদ্ধেশ্বরী, মানে মনিপুরী ঘাট থেকে নিকলীর দামপাড়ায় গিয়েছি আবার এসেছিও। কিন্তু এখন আর পারি না।

এর পেছনে রয়েছে এক বিশাল চক্রান্ত। নদীর বা হাওরের পানির গতিপথে নানা প্রকারের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। কোথাও ব্রিজ-কালভার্ট, কোথাও মৎস্য চাষ আবার কোথাও বা বন্যার হাত থেকে কৃষিকে রক্ষা করার নামে অপরিকল্পিত বাঁধ। তাই নদী খুন করা হচ্ছে যাচ্ছেতাই ভাবে।

এই নদী নিয়ে আমার আবেগ অনেকটা নাড়ির টানের মতো। কারণ আমাদের মৃত নরসুন্দা এখনো বেঁচে আছে আমার জন্মভূমি নিকলীর দামপাড়ায়। সরু হলেও এখনো তা বহাল আছে। এই নদীতেই আসতো বিলেতি ‘ফাইন্না জাহাজ’ (Sea Airship-কে আমাদের প্রবীণ লোকেরা পানি জাহাজ না বলে ফাইন্না জাহাজ বলেই ডাকতেন)। এখান থেকে পরিচালিত হতো ‘দি চিটাগাং জুট মিলস’; এটা এক সময় যৌথভাবে ভারতের বিখ্যাত টাটা-বিড়ালা গ্রুপও পরিচালনা করেছে। আর ছিলো আধুনিক একটা প্রেস। আমাদের দামপাড়া থেকেই শুরু হয়েছিলো নিকলীর ইতিহাস খ্যাত নৌকাবাইচ, এই নরসুন্দার কল্যাণেই। আমি নিজে দেখেছি দামপাড়ায় নৌকা বাইচ। এখন যেখানে হচ্ছে, সেটা পরে চালু হয়েছে, নদী আরো সরু হয়ে যাওয়ার পরও বেশিসংখ্যক নৌকাকে সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি দর্শকদের সুবিধার জন্য।

নদীতে এখন পালতোলা নৌকা দেখা যায় না। শুধু একঘেয়ে তীক্ষ্ণ শব্দের ইঞ্জিনের নৌকাই দেখা যায়। ইঞ্জিনের একঘেঁয়ে শব্দ আর ইঞ্জিনের পোড়া বর্জ্য নির্গত হচ্ছে নদীতেই। আর এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি জলজ সম্পদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একটা সূত্র বলছে নরসুন্দা নদ আর এর জলের একটি উৎস হচ্ছে ভাটি এলাকার পানি। আর এটার জোড়ালো প্রমাণ হচ্ছে দামপাড়ায় এখনো এর বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা।

৩২ কিলোমিটারের প্রাণবন্ত নরসুন্দার এখনো বেঁচে থাকা দামপাড়া অংশের তীরে, যেখানে আমার জন্ম। আর বেড়ে ওঠা আজকের মৃত নরসুন্দার তীর কিশোরগঞ্জ শহরে। এলাকায় গেলে সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি নরসুন্দার তীরেই বসে আড্ডা দেই আর সময় হলেই ছুটে যাই জন্মভূমির টানে নরসুন্দার বুকে। আরো একটু বেশি সময় হাতে থাকলে জোছনা রাতে নৌকা নিয়ে যাই মাঝ হাওরে, ইঞ্জিন বন্ধ করে নৌকার বুকে শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখি। সে এক উথাল পাতাল রূপ… কোনো চিত্রশিল্পী এর ছবি আঁকতে পারবে বলে মনে হয় না, আর এ যাবৎ কালে কোনো ক্যামেরাও তৈরি হয়নি সেই অসাধারণ মুহূর্তগুলো ধরে রাখার…

নরসুন্দার পাঁজরে আমার নাড়ী…
তোমার কোলে আমার বাড়ী…

নরসুন্দার কান্না শুনতে কি পাও?

আসুন নরসুন্দাকে বাঁচানোর একটা শেষ চেষ্টা করে দেখি। দল মত নির্বিশেষে আওয়াজ তুলুনঃ নরসুন্দাকে বাঁচতে দাও…

লেখক : উন্নয়ন ও অধিকার কর্মী

সূত্র : হে কিশোরগঞ্জবাসী, নরসুন্দার কান্না শুনতে কি পাও?  [ঢাকা টাইমস, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬]

Similar Posts

error: Content is protected !!