সুস্থভাবে বাঁচতে মাটিতে বসে খাওয়ার অভ্যাস করুন!

আমাদের নিকলী ডেস্ক।।

আধুনিকতার অজুহাত দেখিয়ে যারা মাটি থেকে টেবিল-চেয়ারে পৌঁছেছেন, মানে মাটিতে বসে খেলে পাছে সম্মান যায় তাই এখন ডাইনিং টেবিলে, গলায় রুমাল ঝুলিয়ে লাঞ্চ-ডিনার সারেন, তাদের কথা ভেবেই এই প্রবন্ধটি লেখা। কারণ টেবিল-চেয়ারে বসে খাবার খেলে পেট ভরে ঠিকই, কিন্তু শরীরের কোনো মঙ্গল হয় না।

অন্যদিকে মাটিতে বাবু হয়ে বসে খেলে একাধিক উপকার পাওয়া যায়। সেই সাথে শরীরও রোগমুক্ত হয়। এখন নিশ্চয় ভাবছেন মাটিতে বসার সাথে রোগমুক্তির কী সম্পর্ক, তাই তো? এই উত্তর পেতে চোখ রাখুন বাকি প্রবন্ধে।

১। মাটিতে বসে খেলে অজান্তেই একাধিক আসন করে ফেলি আমরা : একেবারে ঠিক শুনেছেন। মাটিতে বসে খাওয়ার সময় আমরা নিজেদের অজান্তেই একাধিক আসন, যেমন- সুখাসন, সোয়াস্তিকাসন অথবা সিদ্ধাসন করে ফেলি। ফলে মাটিতে বসে খাওয়ার সময় পেট তো ভরেই সেই সাথে শরীর ও মস্তিষ্ক, উভয়ই ভেতর থেকে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

২। হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে : বাবু হয়ে বসে খেলে হজম ক্ষমতার উন্নতি হয়। তাই তো যাদের বদহজমের সমস্যা রয়েছে বা যারা প্রায়শই গ্যাস-অম্বলে ভোগেন তাদের ভুলেও টেবিল চেয়ারে বসে খাওয়া উচিত নয়। পরিবর্তে মাটিতে বসে পাত পেরে খাওয়া উচিত। আসলে বাবু হয়ে বসে খাওয়ার সময় আমরা কখনো আগে ঝুঁকে পরি, তো কখনো সোজা হয়ে বসি।
এমনটা বারে বারে করাতে হজম সহায়ক “ডায়জেস্টিভ জ্যুস”-এর ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে হজম প্রক্রিয়া খুব সুন্দরভাবে হতে থাকে। এখানেই শেষ নয়, মাটিতে বসে থাকার সময় আমাদের শিরদাঁড়ার নিচের অংশে চাপ পরে ফলে স্ট্রেস লেভেল কমে গিয়ে সারা শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

৩। আয়ু বৃদ্ধি পায় : আপনি কী সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বাঁচতে চান? তাহলে আজ থেকেই মাটিতে বসে খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়।
সেই সাথে শরীরের অন্দরে কোনো ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে বলা হয়েছিল যারা কোনো সাপোর্ট ছাড়া মাটিতে বসে থাকতে থাকতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরতে পারেন, তাদের শরীরে ফ্লেক্সিবিলিটি বেড়ে যাওয়ার পাশপাশি একাধিক অঙ্গের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায়। আর যারা এমনটা করতে পারেন না, তাদের আয়ু অনেকাংশেই হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, এই গবেষণাটি ৫১-৮০ বছর বয়সিদের মধ্যে করা হয়েছিল।

৪। শরীর শক্তপোক্ত হয় : মাটিতে বসে খাওয়ার অভ্যাস করলে থাই, গোড়ালি এবং হাঁটুর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে শিরদাঁড়া, পেশি, কাঁধ এবং বুকের ফ্লেক্সিবিলিটিও বাড়ে। ফলে সার্বিকভাবে শরীরে সচলতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি নানাবিধ রোগও দূরে থাকে।

৫। রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটে : আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিটি অঙ্গে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়াটা জরুরি। যত এমনটা হবে, তত রোগের প্রকোপ কমবে। সেই সাথে সার্বিকভাবে শরীরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। আমরা যখন বাবু হয়ে বসে থাকি তখন সারা শরীরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের চলাচল বেড়ে যায়। আর এমনটা হলে কী কী উপকার পাওয়া যায়, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না।

৬। ওজন হ্রাস পায় : মাটিতে বসে খাওয়ার সময় আমাদের ভেগাস নার্ভের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। ফলে পেট ভরে গেলে খুব সহজেই ব্রেনের কাছে সে খবর পৌঁছে যায়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়।

এমনটা যত হতে থাকে তত ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও কমে। প্রসঙ্গত, আমাদের পেট ভরেছে কিনা সেই খবর ব্রেনের কাছে পৌঁছালেই আমাদের খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। আর এই খবর মস্তিষ্ককে পাঠায় ভেগাস নার্ভ। এবার বুঝতে পরছেন তো মাটিতে বসে খাওয়া-দাওয়া করা কতটা জরুরি।

সূত্র : সুস্থভাবে বাঁচতে মাটিতে বাবু হয়ে বসে খাওয়ার অভ্যাস করুন!  [দেশে বিদেশে, ১২ জুলাই ২০১৭]

Similar Posts

error: Content is protected !!