কিশোরগঞ্জে ৭ম শ্রেণীর ছাত্রকে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম!

বিশেষ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ ।।

কিশোরগঞ্জে এক প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে শহরের জেলা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবাসিক হোস্টেলে এ শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার ফাহিম আহমেদ অন্তর আখড়া বাজার এলাকার বাসিন্দা রওশন আরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোজিনা বেগম ও সরকারি কর্মচারি আমির উদ্দিন ভূইয়া দম্পতির সন্তান। সময় দিতে পারেন না বলে সন্তানকে তারা এ স্কুলে ভর্তি করে স্কুলের হোস্টেলে রেখেছিলেন।

বুধবার ১৮ অক্টোবর দুপুরে বাসায় গিয়ে অন্তরের সাথে কথা হলে সে জানায়, হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক ও শিক্ষক সুমন আহমেদ দুষ্টুমি করার অভিযোগে রড দিয়ে নির্মমভাবে মারপিট করে। এতে তার বাম হাতের আঙ্গুল ও পা মারাত্মকভাবে জখম হয়। পরে রক্তাক্ত ওই শিশুকে হাসপাতালে না নিয়ে একটি ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে আবার হোস্টেলে নিয়ে যান।

সে আরো জানায়, তখন ওই শিক্ষক এ ঘটনা কাউকে না বলতে শিশুটিকে চাপ দেন এবং ভয়ভীতি দেখান। পরে রাত ১১টার দিকে লুকিয়ে আরেকজনের মোবাইল ফোন দিয়ে এ ঘটনাটি তার মাকে জানায় ফাহিম। খবর পেয়ে মা ও অন্য আত্মীয়স্বজন হোস্টেল থেকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান শিশুটিকে। সেখানে চিকিৎসা করিয়ে বাসায় নিয়ে যান।

ফাহিমার খালা ঝর্ণা আক্তার অভিযোগ করেন, নির্যাতনের পর স্কুলের অধ্যক্ষও শিশুটিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ তার পরিবার নিয়ে হোস্টেলের উপরে থাকেন। তাই এ ঘটনার দায় তিনিও এড়াতে পারবেন না।

এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রাত থেকে একটি মহল উঠে-পড়ে লাগে। এলাকার প্রভাবশালী লোকজনকে ধরে এ ব্যাপারে কোনো আইনি ব্যবস্থা না নিতে অনুরোধ আসতে থাকে অভিভাবকদের কাছে। এ অবস্থায় নিপীড়ক শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানা-পুলিশ করেনি পরিবারটি। ফাহিমের নানা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালেক জানান, এলাকার কিছু লোকের অনুরোধে তারা ওইদিকে যায়নি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে ঘটনার জন্য মাফ চেয়েছেন শিক্ষক সুমন।

বুধবার দুপুরে স্কুলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তখন অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে জানানো হয়, স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। কোনো শিক্ষক নেই। অধ্যক্ষ বাসায় আছেন। এ সময় জানানো হয়, স্কুলে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। সব মিলিয়ে সাড়ে তিনশ’ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে এখানে। তাদের মধ্যে ২২ জন শিক্ষার্থী স্কুলের আবাসিক হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা না গেলেও অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তিনি এ সময় তার বিরুদ্ধে শিশুটিকে গালিগালাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

Similar Posts

error: Content is protected !!