মোঃ হেলাল উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষাই প্রাণ শক্তি। হাওর এলাকার বঞ্চিত জনমানুষদের ছেলেমেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার কারপাশা ইউনিয়নের নানশ্রী (সিংগারপাড়) আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটি নিকলী-করিমগঞ্জ সংযোগ সড়কের পার্শে মনোরম পরিবেশে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা মানবেতর জীবনযাপন করে পাঠদান করে যাচ্ছেন। আঠার বছর অতিবাহিত হলেও মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তি করা হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল ইউনিয়নে কেবলমাত্র দু’টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মজলিশপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় এবং অপরটি নানশ্রী সিংগারপাড় আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা। সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে সবচেয়ে শিক্ষার হার কম নিকলী উপজেলায়। এখানকার বিশিষ্টজনেরা এর কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন, হাওরাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যায় কম থাকায় শিক্ষার হার বাড়ছে না। এছাড়া সড়কপথে যোগাযোগ করতে না পারায় বর্ষা মৌসুমে ছেলেমেয়েরা পানির ভয়ে প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয়ে যেতে পারে না।
যে সমস্ত গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছে সে গ্রামগুলি হলো নানশ্রী, বাঘুয়াখালী, পূর্বহাটি, রংপুর হাটি, মধ্যহাটি, সিংগারপাড়, জালালপুর, সহরমুল, গৌরিপুর ও কারপাশা। এলাকার সাধারণ লোকজন বলছেন, এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে না উঠলে এসব গ্রামের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে আজীবন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হতো। সরকার এ এলাকার শিক্ষার দিক বিবেচনায় নিয়ে ৯৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬১০ টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করে দিয়েছেন দ্বিতীয় তলার একটি ভবন। দিয়েছেন কম-বেশি শিক্ষা সামগ্রী।
বর্তমানে মাদ্রাসায় প্রায় ৬ শ’ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে আসছে। গত আঠার বছর বয়সে মাদ্রাসার সমাপনী, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় বিভিন্ন বছরে তাদের ৬টি জিপিএ-৫ সহ শতভাগ পাসের গৌরব রয়েছে। মাদ্রাসাটি এমপিও না হওয়ায় এলাকাবাসী অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন যাবত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক জেলা আইনজীবি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুল হক খান (সাজন)।
প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ দেড় যুগ পার হলেও এমপিওভুক্ত করা হয়নি। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা এলাকার মাদ্রাসাটি কি সেই সুবিধা পাবে? এমন প্রশ্নে সভাপতি জানান, যদি সরকার এমপিও দেয় তবে আমি শতভাগ আশাবাদী আমাদের এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তি করা হবে। তিনি আরো বলেন, এ মাদ্রাসাটি উপজেলার একমাত্র মাদ্রাসা যে মাদ্রাসার এমপিও নেই।
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আঃ আউয়ালের সাথে মাদ্রাসার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের সমস্যার কোনো শেষ নেই। মূল সমস্যা এমপিও। আঠার বছর বেতন ছাড়া শিক্ষকেরা নিয়মিত শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন। অথচ এই শিক্ষকগণই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি চাই পরবর্তীতে সুবিধা এলে যেন এই মাদ্রাসাটিকে এমপিও’র অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন পাঠদানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হতাশা থেকে মুক্তি দেবে সরকার। এ ছাড়া আমার প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের আলাদা একটি কমন রুম, টয়লেট, আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল ও খেলার মাঠ প্রয়োজন।