বিশেষ সংবাদদাতা ।।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, রাজনীতি এখন চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের পকেটে। এ জন্য রাজনীতির এই করুণ অবস্থা। এটা আমাদের জন্য কলঙ্কও বটে। তিনি ‘ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের’ প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, টাকা রোজগারের ইচ্ছা থাকলে আরো অনেক পেশা আছে। রাজনীতি ব্যবসায় জায়গা না। রাজনীতি করতে হবে সততার সঙ্গে। সততা ছাড়া কেউ রাজনীতিতে সফল হতে পারেন না।
তিনি নিজের প্রসঙ্গে বলেন, আমি সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছি বলেই এতদূর আসতে পেরেছি। আর বিদেশে গিয়েও জোর গলায় কথা বলতে পারি। তিনি সোমবার ১২ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেতু’ উদ্বোধন করার পর বিকালে পাইলট হাইস্কুল মাঠে এক নাগরিক সমাবেশে বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি এ সমাবেশে কিশোরগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওরে একটি ক্যান্টনমেন্ট স্থাপনেরও ঘোষণা দেন। তিনি অষ্টগ্রাম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও জানান।
নাগরিক কমিটির আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক হায়দারির সভাপতিত্বে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস। এ সময় জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ ও পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খানসহ উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জের রাজনীতিবিদ রাসেল আহমেদ তুহিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা সৈয়দা নাসিমা আক্তার রিতা, ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান কাঞ্চন প্রমুখ।
রাষ্ট্রপতি দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে অষ্টগ্রামে আসেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেতু’ উদ্বোধন করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মাওলা জানান, ৩৪১ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
নিজের সাবেক নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জের ৩ উপজেলা অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনায় আরো বেশি উন্নয়নকাজের আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, এই ৩ উপজেলায় সারা বছর চলাচলের উপযোগী রাস্তা করা হবে। সামনের শুষ্ক মৌসুমে এর কাজ শুরু করা হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বেড়া দিয়ে আপনাদের আটকে রেখেছে, আমাকেও বন্দি করে রেখেছে। আপনারা ইচ্ছে করলেই আমার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। তাই নিরাপদ দূরত্বে থাকবে হবে। একটা সময় আমি ৩ উপজেলার বেশিরভাগ ঘরে গিয়েছি। এখন আর এটা সম্ভব না। সারাজীবন তো আমি রাষ্ট্রপতি থাকব না, সে সময় আবার আপনারা আমার কাছে যেতে পারবেন। তখন আর বাধা থাকবে না।
এ সময় রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজোয়ান আহমেদ তৌফিক এ এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতিকে আরো কাজের জন্য অনুরোধ করেন।
এর জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি ছিলাম চাষার ছেলে এমপি। তৌফিক রাষ্ট্রপতির ছেলে এমপি। এ সময় তিনি আরো বেশি উন্নয়নকাজের আশ্বাস দেন।
এছাড়া রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে অষ্টগ্রামে তার শৈশব, শিক্ষা জীবন, রাজনীতি ও আইনি পেশাসহ নানা বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি স্থানীয় ডাকবাংলোতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করেন। অষ্টগ্রাম ডাকবাংলোতে রাত্রিযাপন করে মঙ্গলবার ১৩ অক্টোবর দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে তিনি অষ্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে যাবেন।