মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
হাটহাজারীতে একটি ব্রীজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও ঢালাই কাজে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিমেন্ট না দেয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ওই এলাকার উত্তেজিত জনতা। তবে অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সেলিম অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবি করে বলেন, দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে তাদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটিয়েছে একটি মহল। শুক্রবার (৩ মে ২০১৯) উপজেলার গুমাণমর্দ্দন ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বিরাজ করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রকৌশলী ও ঠিকাদার মিলে ব্রীজটির নির্মাণ কাজে পুকুরচুরি করছিলেন। ঘটনার দিন বিকালের দিকে এলাকাবাসীর তোপের মুখে তারা কাজ ফেলে পালিয়ে যান। দেখা গেছে, বেলা ১টার দিকে দেয়া ঢালাই রাত সাড়ে ৮টার দিকেও জমাট বাঁধেনি। কাজ শুরুর প্রথম দিকেও অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। পরে তাদের লাইসেন্স বাতিল করার আশ্বাস দিয়ে প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে শুক্রবার সবাই যখন জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে চলে যান ঠিক তখনি ব্রীজ নির্মাণ কাজে জড়িতরা তড়িঘড়ি করে কয়েকটা অংশে ঢালাই দিয়ে দেয়। নামাজ শেষে স্থানীয়রা এসে ঢালাই কাজে নিম্নমানের সামগ্রী, সিমেন্টের ব্যবহার কম দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়দের তোপের মুখে কাজ ফেলে নির্মাণ কাজে জড়িতরা পালিয়ে গেলেও আটকে রাখেন নির্মাণ শ্রমিকদের মাঝি হেলাল উদ্দীনকে। কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কথা স্বীকার করে হেলাল উদ্দীন বলেন, আমাদেরকে যেভাবে কাজ করার জন্য ঠিকাদার বলে দিয়েছেন আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। আমার কোনো দোষ নাই। এসময় উত্তেজিত জনতা একত্রিত হয়ে নিম্নমানের ঢালাই উপড়ে ফেলেন।
জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় উপজেলার নাঙ্গলমোড়া ও গুমাণমর্দ্দন ইউনিয়নের সংযোগস্থলে গুমাণমর্দ্দন ইউপির চৌমুহনী বাজার কাটাখালী খালের ওপর ২৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রীজটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। গত ১৮ সালের সেপ্টেম্বর অক্টোবরের দিকে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হলেও গত তিন মাস পূর্বে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২৪ লক্ষ টাকার এ কাজটি শুরু করে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান। তবে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ব্রীজের কাজ শুরু হয়েছিল গত ৬ মাস আগে কিন্তু দুঃখের বিষয়, এতো গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ত এলাকার ব্রীজের কাজটি ঠেলাগাড়ির গতিতে চলে আসছিল তাও কোনো রকমে, যেনো দেখার কেউ নেই। ব্রীজ নির্মাণের এমন গতিতে চরম দুর্ভোগে পড়ে এ রোড ব্যবহার করা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ।
উত্তেজিত জনতা স্থানীয় চেয়ারম্যান মুবিবুর রহমানকে খবর দিলে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান এবং সকলকে উপস্থিত থেকে কাজ বুঝে নিতে পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্রীজের কাজটি করছে তার কোনো যোগ্যতা নাই বলেই মনে হচ্ছে”। তা না হলে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্রীজের কাজের মান এতো বাজে হতো না।
এলাকার সন্তান এডিশনাল পিপি এডভোকেট তসলিম উদ্দীন জানান, নির্মাণ কাজের ন্যূনতম মান রেখেও তো কাজটা করা হয়নি। গত প্রায় সাত আটমাস আগে কাজ শুরু হলেও কাজের তেমন কোনো অগ্রগতিই চোখে পড়েনি। এতো বাজে গতির কাজ কল্পনাও করা যায় না। সামনে বর্ষা মৌসুমে স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে গুণগত মান বজায় রেখে অতি দ্রুত ব্রীজের কাজটি সম্পন্ন করার এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত সেলিম এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার সেলিম সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে জানান, ওই ব্রীজের কাজ শুরু করার পর বৃষ্টির জন্য কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। পরে কাজ করতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন আমার প্রতিনিধির কাছে চাঁদা দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় তারা পরিকল্পিতভাবে আমার শ্রমিকদের মারধর করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিবেন বলেও জানিয়েছেন।
ঘটনার পর পরই স্থানীয়রা বিষয়টি ইউএনও রুহুল আমিনকে জানালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার আশ্বাস দিলেও শনিবার বেলা ২টা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি বা সংশ্লিষ্ট কেউ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি বলে জানান স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে কথা বলতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি, রাউজান উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কমিটির মিটিংয়ে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি, সময় করে পরিদর্শনে যাব”। বিষয়টা নিয়ে টেনশন করতে হবে না বলেও সাংবাদিকদের জানান তিনি।