মো: আল আমিন, বিশেষ প্রতিনিধি (কিশোরগঞ্জ)
ব্যাপক আলোচনা ও গুঞ্জন থাকলেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পরিবারের কেউ মূল পদ-পদবি পাননি। সবাইকে অবাক করে সভপাতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে দুই আইনজীবীকে। তারা দু’জনই যথাক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
শুক্রবার কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে এ ঘোষণা দেন। সভাপতি হিসেবে প্রবীণ আইনজীবী কামরুল আহসান শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এম এ আফজলের নাম ঘোষণা করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, এটি ‘প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার প্রস্তাব। আপনারা শেখ হাসিনার প্রস্তাব সমর্থন করেন কি-না জানতে চান সম্মেলনে আসা নেতাকর্মীদের কাছে। তখন নেতাকর্মীরা দু-হাত তুলে এ প্রস্তাব মেনে নেন।
পুরাতন স্টেডিয়ামে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সৈয়দ আশরাফ বলেন, কিশোরগঞ্জে যে নজির সৃষ্টি হয়েছে, তা দলের জন্য ভালো উদাহরণ নয়, গত ১৮বছরে নিয়মিত সম্মেলন হলে এখানে ছয়জন সভাপতি ও ছয়জন সাধারণ সম্পাদক পাওয়া যেত। নতুন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হতো। যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতারাও দলের নেতৃত্ব আসত। এ সময় তিনি কিশোরগঞ্জের উদাহরণ দেশের অন্য কোনো জেলা যেন ‘কপি’ না করে, সেই আহ্বান জানান।
তিনি নতুন কমিটির উদ্দেশ্যে বলেন, আর যে আমরা অতীতের মতো পথ না হাঁটি। প্রতি তিন বছর পর পর আপনারা সম্মেলন করবেন। তিনি জাতীয় সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, শেখ হাসিনা প্রতি তিন বছর পর পর জাতীয় সম্মেলন করতে পারলে আপনারা জেলা পর্যায়ে কেন পারবেন না।
তিনি নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শুধু জেলা নয়, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোর সম্মেলনও দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন তিনি। সম্মেলনের প্রধান বক্তা আ.লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই বলে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, যারা পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে পাকিস্তানি আদর্শ বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়েছে-আজ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্তা নেওয়া হচ্ছে বলেই তিনি কষ্টে আছেন। আসলে দেশের মানুষ ভালো আছে, ভালো নেই তিনি (খালেদা) ও তার দল।
বেলা দুই টায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা পুরাতন স্টেডিয়ামে মিছিল নিয়ে যেতে থাকে। দুপুরের মধ্যে পুরো স্টেডিয়াম কানায় কানায় ভরে যায়। বিশেষ করে দুই সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রীর চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর সমর্থকরা শহরে ব্যাপক শো-ডাউন করে। তাদের সমর্থকরা ব্যানার, পোস্টার ও ফ্যাস্টুন নিয়ে সম্মেলনে যান। ফলে সম্মেলনস্থল পুরাতন স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ভিড়ের কারণে অনেকে স্টেডিয়ামেই ঢুকতে পারেনি। তবে জেলা আওয়ামী লীগের কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে এসব ব্যানার-ফেস্টুন গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হন তারা। তবে সম্মেলন শুরুর আগে স্টেডিয়ামে দু’পক্ষের নেতাকর্মীদের মাঝে এক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সম্মেলনস্থলে ব্যাপক হাঙ্গামা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এ দু-নেতার কেউ মূল পদ-পদবিতে যেতে না পরায় তাদের সমর্থকরা হতাশ হয়েছে। আর পুরো স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ ছিল তাদের সমর্থকদের দ্বারাই। ফলে কমিটি ঘোষণার পর কোনো উল্লাস বা স্লোগান দিতে দেখা যায়নি নেতাকর্মীদের। অনেকটা নীরবে বের হয়ে যান স্টেডিয়ামে উপস্থিত অন্তত ৫০-৬০হাজার নেতাকর্মী। তবে অনেকে বলেছেন, সৈয়দ আশরাফ বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শহজাহানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজলের পরিচালায় সম্মেলনে বক্তৃতা করেন, দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মশিউর রহমান হুমায়ুন, উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বদিউল ইসলাম ডব্লিউ, বাণিজ্য ও শিক্ষা সম্পাদক আব্দুস সাত্তার প্রমুখ। এর আগে স্থানীয় নেতারা বক্তৃতা করেন।
সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন সভাপতি পদ পেয়েছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন প্রয়াত সংসদসদস্য একেএম শামছুল হক গোলাপ। এর পর বিভিন্ন সময় সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয়নি।
জেলা আ.লীগের সভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহান সম্পাদক এম এ আফজল
![](https://i0.wp.com/amadernikli.com/media/uploads/2016/02/kishoregonj-aleague.jpg?resize=600%2C320&ssl=1)