মহসিন সাদেক, লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি ।।
কালজয়ী গান “নিশিতে যাইও ফুলবনে রে ভ্রমরা” গানের রচয়িতা বাংলা মরমী সাহিত্যের অন্যতম মরমী সাধক শেখ ভানু শাহর স্মৃতিফলক উন্মোচন ও শেখ ভানু শাহ কমপ্লেক্স-এর সমাধিসৌধের সংস্কার কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামে শেখ ভানু শাহের মাজার প্রাঙ্গনে স্মৃতিফলকের ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ।
বুধবার বেলা ১১টায় মাজার প্রাঙ্গনে উদ্বোধন পূর্ববর্তী সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ। বাংলা সাহিত্যের মরমী সাধক শেখ ভানু শাহ একটি উজ্জ্বলতম নাম উল্লেখ করে তার সাহিত্য চর্চার জন্য উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। আলোচনায় বক্তব্য রাখেন লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ শাহিনা আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্চিতা কর্মকার, রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি বাহার উদ্দিন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন কুমার দে, প্রধান শিক্ষক মামুনর রশিদ চৌ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, তত্ত্বজ্ঞানী মরমী কবি শেখ ভানু শাহ ১৮৪৯ মতান্তরে ১৮৫৯ সালে হবিগঞ্জে লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার রচিত গজল, মুর্শিদী, আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা সমৃদ্ধ মরমী সংগীত ব্যাপক সমাদৃত। শেখ ভানু শাহ অল্প বয়সে ধানের ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন এবং কম সময়েই তিনি একজন মহাজন হিসাবে পরিচিতি পান। আর্থিক সমৃদ্ধি লাভ করেন। কিন্তু আকস্মিক এক ঘটনা তার চিন্তা চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে। নৌকাযোগে ব্যবসায়িক কাজে তিনি যাচ্ছিলেন মেঘনা নদী হয়ে। পথিমধ্যে মেঘনা তীরবর্তী মাদনা এলাকায় পৌছলে নদীর স্রোতে একটি মৃতদেহ ভেসে যেতে দেখেন ভানু। এসময় তার নজরে আসে লাশের উপর বসে একটি কাক লাশের চোখ ঠুকরে খাচ্ছে; যা ভানু শাহর মনে গভীর রেখাপাত করে। মানব জীবনে নশ্বরতা ও সকরুণ পরিণতি তাকে ব্যাকুল করে তোলে।
প্রায় সহস্রাদিক আধ্যাত্মিক গজল ও মুর্শিদী গানের স্রষ্টা তিনি। যে গানের প্রতিটি পংক্তি মানব মনকে আত্মার অনুসন্ধানে ব্যাপৃত করে। শেখ ভানু শাহর চিন্তক্রম বিকশিত হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন্দ্র করে। যার জ্ঞানের আলোয় আলোকিত আমাদের মরমী জগত।
শেখ ভানু শাহ সুফিবাদের শিক্ষা নিতে বাগদাদ হতে বাংলাদেশে আগত পীর মিরান শাহ তাতারীর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তার লিখিত দু’টি বইয়ের নাম পাওয়া গেছে। বইগুলি হচ্ছে আশরাফুল এশক ও পুঁথি শেখ ভানু শাহ। এছাড়াও জনপ্রিয় বেশক’টি গানের কলি হচ্ছে “নিশিতে যাইও ফুলবনে রে ভ্রমরা নিশিতে যাইও ফুলবনে”, “আমি মইলাম তোর ফিরিতের আশায়”, “আরেও জ্বালা নিবেনারে কি আগুন জ্বালাইলিরে মনে নিভাইলেও নিভেনারে”, “মুখেতে মাখন মাখা অন্তরে গরল ছাই এমনও ঈমানের কার্য নাই”।
১৯১৯ খৃষ্টাব্দে এই মহান সাধক দেহ ত্যাগ করেন।