ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম বাদল
ঢাকার বাজারে প্রতি দিন হাজার হাজার মহিষ ঢোকে। সেসব মহিষ কোথায় যায় আমরা কেউ কি তার খোঁজ রাখি? খোঁজ রাখি না বলেই রাতের আঁধারে হাজার হাজার মহিষ চোখের পলকে গরু হয়ে যায়! আমার আপনার চোখের সামনে বিভিন্ন দোকানে গরুর গোশত বলে যা বিক্রি করা হয় তা মোটেও গরুর গোশত না। বলতে পারেন, তাহলে গোশত ব্যবসায়ীরা সেটি ক্রেতাকে বলেন না যে? কারণ একটাই- মহিষের গোশত বললে আমরা কেউ-ই কিনতে চাই না। তাই তো বাধ্য হয়েই দোকানি ক্রেতার কাছে মহিষকে গরু বলে চালিয়ে দেন।
দোষটা দোকানির নয়, আমাদের। কুসংস্কারে আমরা সেকেলে স্বভাব ছাড়তে পারি না। ফলে ভেবে দেখি না, কোন গোশতের কী গুণ আছে। খাদ্যের গুণাগুণ বলতে আমরা বুঝি যে খাদ্য খেলে আমরা সুস্থ থাকি, সবল থাকি। চলাফেরায় শক্তি পাই ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
মহিষের গোশতে চর্বি তুলনামূলক কম। গোশতের স্তরের মধ্যে চর্বি থাকে না। গোশতের ওপরে ও চামড়ার নিচে চর্বির স্তর থাকে। এ জন্য মহিষের গোশত খেলে রক্তচাপ ও হার্টের রোগের ঝুঁকি কম থাকে। গোশতে চর্বিজাতীয় উপাদান কম থাকায় গোশতের স্তরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও প্রোটিনজাতীয় উপাদান বেশি থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শক্তি বাড়ায় ও সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। অন্য দিকে মহিষের গোশতে অ্যালার্জিক উপাদান কম বা নেই বললেই চলে। তাই মহিষের গোশত অ্যালার্জি, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের রোগে ভোগা রোগী সহজেই খেতে পারেন। গরু ও খাসির গোশতের চেয়ে মহিষের গোশতের পুষ্টিমান বেশি। ফলে মহিষের গোশত কম খেয়েও বেশি পুষ্টি পাওয়া য়ায। মহিষের গোশতে আঁশ বড় হওয়ায় পুষ্টিগুণও বেশি। তাই এটি সহজেই হজম হয়।
মহিষ পালন করা সহজ এবং এদের রোগবালাইও কম হয়। তাই দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখায় জন্য গরু-ছাগলের পাশাপাশি মহিষ পালন করা দরকার। দেশের ক্রমবর্ধমান গোশতের চাহিদা মেটানোর জন্য মহিষ পালন করা ও মহিষের গোশত খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। মহিষের দাঁত, হাড়, চোয়াল, লেজ, শিং ইত্যাদি শিল্প কারখানায় বিভিন্ন দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
বিশেষ করে মহিষের হাড় দিয়ে জিলেটিন তৈরি হয়, যা জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ক্যাপসুল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। মহিষের চামড়া অন্যান্য প্রাণীর চামড়ার চেয়ে মোটা হওয়ায় চামড়াজাত সুটকেস, বড় বড় ব্যাগ, জুতার সোল ও কলকারখানার মেশিনের ওয়াসার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়; যা অন্যান্য প্রাণীর চামড়া দিয়ে তৈরি করা সম্ভব নয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হিসেবে মহিষের গোশত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, মহিষের গোশত ক্যান্সার প্রতিরোধকারী খাবার। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া রোগী ও হার্টের অসুবিধা আছে এমন রোগীকে মহিষের গোশত খাওয়ার পরামর্শ দেন। মহিষের গোশতে গরুর গোশতের চেয়ে ৭২ থেকে ৯০ শতাংশ চর্বি কম থাকে, ৫০ শতাংশ কম কোলেস্টোরল এবং ৩০ শতাংশ বেশি প্রোটিন থাকে।