৮০ ভাগ স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব

স্ট্রোকের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া এত বেশি যে, এটা প্রতিরোধ করা জনস্বার্থের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রাথমিক প্রতিরোধ খুব বেশি কার্যকরী নয়।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে শতকরা ৮০ ভাগ স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদিও স্ট্রোক যে কারো ক্ষেত্রে ঘটতে পারে, কিন্তু কিছু ঝুঁকি স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে দেয়। এ জন্য ব্যক্তিগত ঝুঁকিগুলো জেনে সেগুলো কমাতে পারলে এবং স্ট্রোক হওয়ার সাথে সাথে তা বুঝে ত্বরিৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারলে স্ট্রোকের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
১। নিয়ন্ত্রণযোগ্য ঝুঁকি
* উচ্চ রক্তচাপ
* এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন
* রক্তে চর্বির আধিক্য
* এথারোসকিরোসিস- শরীরে, মস্তিষ্কে
* রক্তপ্রবাহের সমস্যা
* ক্যারোটিড ধমনির সমস্যা
* ডায়াবেটিস
* ধূমপান
* মদপান
* স্থূলতা (ওবেসিটি)
* জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন

২। অনিয়ন্ত্রণযোগ্য ঝুঁকি
* অফ্রিকান-আমেরিকান
* মহিলা
* হার্টে জন্মগত ফোরামেন ওভেল ছিদ্র
* ফাইব্রোমাস কুলার ডিসপ্লাসিয়া
* বয়স
* মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন (হার্ট অ্যাটাক)

৩। একবার স্ট্রোক হলে পরবর্তীকালে স্ট্রোক প্রতিরোধের ব্যবস্থা
* অ্যান্টিপ্লাটিলেট ওষুধ, যেমন- এসপিরিন, কপিডগ্রেল সেবন
* স্ট্যাটিন- রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
* অ্যান্টিকোগ্লুলেন্ট, যেমন- ওয়ারফেরিন সেবন (এট্রিয়াল ফিব্রিলেশনে)
* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
* ক্যারোটিড অ্যান্ড আর্টারেক্টমি বা এনজিওপ্লাস্টি (ক্যারোটিড ধমনি স্টেনোসিস) হলে

নিম্নলিখিত ঝুঁকিগুলো কমিয়ে ৮০ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ব্যক্তিগত ঝুঁকিগুলো জেনে ও স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা গেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ব্যবস্থা-
* উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে স্ট্রোকের বড় ঝুঁকি, যদি তা ঠিকমতো চিকিৎসা করে নিয়ন্ত্রণে না রাখা হয়। এ জন্য চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ মেপে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
* এট্রিয়ালফিব্রিলেশন হার্টের অস্বাভাবিক স্পন্দন, যা ৫০০ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এতে হার্টে রক্ত জমাট বাঁধা ত্বরান্বিত করে, ফলে স্ট্রোক হতে পারে।
* ধূমপান স্ট্রেকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে রক্তনালীর দেয়ালে ত সৃষ্টি করে, এতে ধমনিতে প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি করে রক্তচাপ বাড়িয়ে হার্টের কাজকে কঠিন করে দেয়।
* মদপান বন্ধ করে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়া।
* কোলেস্টেরল রক্তের ভেতরে চর্বিজাতীয় পদার্থ। এটা খাবারের মাধ্যমে শরীরে আসে এবং শরীরের ভেতরেও তৈরি হয়। এই কোলেস্টেরল রক্তে বৃদ্ধি হলে ধমনিতে জমাট বেঁধে রক্তপ্রবাহ বাধা সৃষ্টি করে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
* ডায়াবেটিস- চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ও পথ্য পরিমিত গ্রহণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভত।
* অতিরিক্ত ওজন- শরীরের ওজন বেড়ে গেলে রক্তপ্রবাহে বাধা পড়ে। নিয়মিত সপ্তাহে পাঁচ দিন কমপে আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করলে এবং কম ক্যালরি, চর্বি ও লবণ গ্রহণ না করে ওজন কমানো যায়। তা ছাড়া বেশি বেশি ফলমূল ও সবজি খেলেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ওজন কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে এনে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়।

ডা: আকমান আলী
চিফ মেডিক্যাল অফিসার, ইবনে সিনা হাসপাতাল

Similar Posts

error: Content is protected !!