মা‌লিকানা জ‌টিলতায় বন্ধ অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ

আমা‌দের নিকলী ডেস্ক ।।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতার বাধায় বন্ধ হয়ে যাওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ দুই মাস পরও শুরু করা যায়নি। হাসপাতাল ও জেলা পরিষদ—দুই পক্ষই বলছে জমিটি তাদের। এদিকে ঠিকাদার বলছেন, কাজ ফেলে রাখায় তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

গত ১৩ জুলাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী। ফজলুল কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানও।

স্থানীয় লোকজন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর না থাকায় চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রোগীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছিল। কর্তৃপক্ষের একাধিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কার্যাদেশ পায় এমএসএসবি বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ২০ জুন থেকে কাজ শুরু হয়। কিন্তু সীমানাপ্রাচীরের জায়গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নয়, তা জেলা পরিষদের; এমন দাবি করে পরদিন উপজেলার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির অনুগত ব্যক্তিরা ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এমন নির্দেশের পর ঠিকাদারের লোকজন কাজ বন্ধ রাখেন।

এ অবস্থায় ১ জুলাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লাগোয়া স্থানের ২০ থেকে ২৫টি গাছের ডাল কেটে ফেলা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জায়গার গাছের ডাল কেটে ফেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিযোগ করেন। পরে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের জরিপকারীকে (সার্ভেয়ার) দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেন ইউএনও। ইউএনও সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ১৩ জুলাই সকালে আবার কাজ শুরু হয়। পরে ফজলুল হক বিষয়টি জানতে পারেন। কাজ শুরুর এক ঘণ্টা পর তিনি লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন থেকে প্রয়োজনীয় নির্মাণ উপকরণের জোগান রাখা হয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়ে সম্ভাব্য ঝামেলা মোকাবিলার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাহসী হতে পারছে না। প্রশাসনও নীরব। ফলে তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। তাঁরা এখন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক হায়দারী সম্প্রতি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, এ জায়গা জেলা পরিষদের। আর আমি পরিষদের সদস্য। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের কাজের অংশ। আমি যখন জেলা পরিষদে থাকব না, তখন পরিষদের জায়গায় একাধিক হাসপাতাল বানিয়ে ফেললেও ওই দিকে আমার চোখ যাবে না।’ সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের পথ খোঁজার পরামর্শ দেন তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, কাজ শুরু করতে না পারার তথ্য জানিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। তবে কোনো অগ্রগতি নেই।

ইউএনও রফিকুল আলম বলেন, সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী এ জায়গা হাসপাতালের অনুকূলে রয়েছে। আবার জেলা পরিষদ থেকেও জানানো হয়েছে, এ নিয়ে কাগজপত্র রয়েছে। তবে এখনো কোনো কাগজপত্র তিনি হাতে পাননি।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, কলকাতা গেজেট, সিএস, আরওআর—সবই তাঁদের নামে। তবে আরএস রেকর্ডে জায়গাটি হাসপাতালের নামে চলে গেছে। শুধু তা–ই নয়, ডাকবাংলোর জায়গাও হাসপাতালের নামে আছে। তাঁরা এখন রেকর্ড সংশোধনীর জন্য আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকা শ্রেয় বলে মনে করেন তিনি।

 

সূত্র : প্রথম আ‌লো

Similar Posts

error: Content is protected !!