স্ত্রী মারা গেলে স্বামীও পেনশন পাবেন আজীবন

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার পর পেনশন বা অবসর ভাতার মঞ্জুরি পেতে আর হয়রানির শিকার হতে হবে না। ছাড়পত্র পেতে তাকে ঘুরতে হবে না এ মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয়ে। চাকরিরত স্ত্রী মারা গেলে স্বামী আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। বর্তমানে স্ত্রী মারা গেলে স্বামী ১৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পেতেন, এখন সেটি থাকছে না। বিষয়গুলো সংযোজন করে শিগগিরই পেনশন-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান নীতিমালায় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এখন থেকে অবসরে যাওয়া ব্যক্তির চাকরি-সংক্রান্ত সকল তথ্য-উপাত্ত কিংবা ছাড়পত্র দেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা। কারও বিরুদ্ধে নতুন অডিট আপত্তির অভিযোগ তুলে পেনশন মঞ্জুরে বিলম্ব করা যাবে না। অর্থ বিভাগে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা বা দপ্তরের কল্যাণ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেনশন-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করলেই তারা পেনশন পাবেন। পিআরএল শুরুর ২ মাস আগে ছুটি নগদায়ন এবং পেনশন মঞ্জুরিপত্র দেবে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে এ-সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বলা হয়, বর্তমানে পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে অবসরে যাওয়া বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানান ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। পদে পদে ছাড়পত্রের নামে হয়রানির অন্ত নেই। বিষয়টি সহজ করতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশে বলা হয়, পেনশন প্রদান সহজ করতে পিআরএলে যাওয়া কর্মকর্তা, কল্যাণ কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার মধ্যে কার কী দায়িত্ব তা সুনির্দিষ্ট করে অর্থ মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করবে। অবসর গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের নামের তালিকা প্রণয়নের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পত্র দেবে অর্থ বিভাগ। পেনশন মঞ্জুর ও পরিশোধ সহজীকরণ নীতিমালা যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কি-না তা কল্যাণ কর্মকর্তা নিবিড়ভাবে তদারকি করবেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পেনশন মঞ্জুরির কাগজপত্র পরীক্ষা করে পেনশন পরিশোধপত্র (পিপিও) জারির সময়সীমা ১ মাসের পরিবর্তে ১৫ দিন করবেন। পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ পেনশনের জন্য আবেদনকারীর না দাবিনামা সংগ্রহ করবে। পিআরএলে যাওয়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে না-দাবিনামা সংগ্রহ করতে বলা যাবে না।

মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কল্যাণ কর্মকর্তা পেনশনে যাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক তালিকা প্রস্তুত করে না-দাবি সংগ্রহের জন্য যে সকল দপ্তরে কর্মরত ছিলেন সে সব দপ্তরে পত্র দেবেন। অথচ বিদ্যমান নীতিমালায় না-দাবিনামা কত দিনের মধ্যে দেওয়া হবে; সে বিষয়ে সময়সীমা নির্ধারণ করা নেই। সে ক্ষেত্রে অনাপত্তিপত্র দেওয়া বা কোনো আপত্তি তথা পাওনা থাকলে তা জানানোর জন্য ২১ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়া যেতে পারে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হলে অথবা কোনো কিছু না জানানো হলে পাওনাদি যথাযথভাবে পরিশোধ হয়েছে মর্মে পেনশন মঞ্জুর করবে। অনাপত্তি সনদের জন্য অপেক্ষা করে পেনশন মঞ্জুর আটকে রাখা যাবে না। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনাপত্তি প্রদান বা কোনো আপত্তি থাকলে তা না জানানো হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দায়ী থাকবেন, পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। পারিবারিক পেনশন দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সনদপত্র ও নন-ম্যারিজ সনদ সর্বশেষ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর সংবলিত প্রত্যয়ন অংশ অপ্রয়োজনীয় এবং তা পেনশনভোগীর পরিবারের জন্য এটি সংগ্রহ কষ্টকর বিধায় তা বাদ দিতে হবে। পিআরএল শুরুর ২ মাস আগে ছুটি নগদায়ন এবং পেনশন মঞ্জুরিপত্র যুগপৎভাবে জারি নিশ্চিতকরণের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় দপ্তর, সংস্থার ২০১৬-১৭ সালের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে আবশ্যকীয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পিআরএলে যাওয়ার ২ মাস আগেই ছুটি নগদায়ন ও পেনশন মঞ্জুরিপত্র আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। অডিট আপত্তির বিষয় তুলে নতুন করে আপত্তি দেওয়া পেনশন সহজীকরণের পরিপন্থী বিধায় তা বাদ দিতে হবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও দপ্তরের বিভিন্ন অফিসে কল্যাণ কর্মকর্তা তাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করবে অর্থ বিভাগ।

সূত্র : দেশকাল

Similar Posts

error: Content is protected !!