কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা ।।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থীদের ফল পাল্টে দেয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বুধবার ৮ জুন সংবাদ সম্মেলন করে ওই ওয়ার্ডের পরাজিত চার মেম্বার প্রার্থী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার পরিচিত এক প্রার্থীকে কারসাজি করে বিজয়ী ঘোষণা করার অভিযোগ তুলে তারা ভোট পুনঃগণনার দাবি করেন। একই দাবিতে তারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন।
চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আব্দুর রশিদ (মোরগ), মো. আফাজ উদ্দিন (ঘুড়ি), মো. রতন মিয়া (টিউবওয়েল) ও মো. দুলাল মিয়া (ভ্যানগাড়ি) বুধবার দুপুরে জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ৪ জুন বড় আজলদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সুন্দরভাবে ভোট গণনাও শেষ হয়। কিন্তু প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তারাকান্দি ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ফল প্রকাশে গড়িমসি শুরু করেন। এদিকে নির্বাচনী ফল জানতে কেন্দ্রের বাইরে শত শত লোক ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত ১০টা বেজে গেলেও ফল প্রকাশ না হওয়ায় বাইরে থাকা প্রার্থীদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তখন মেম্বার প্রার্থীরা ফল প্রকাশে দেরির বিষয়টি জানতে কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এতে প্রার্থী আব্দুর রশিদ এবং আফাজ উদ্দিনসহ অনেকেই আহত হন। এ সময় তাদের নির্বাচনী এজেন্টদেরও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়।
এক পর্যায়ে ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী ফল প্রকাশ না করে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে রাত ১০টার দিকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এ্যাম্বুলেন্সযোগে কেন্দ্র ত্যাগ করেন। পরে দেখা গেল, ভোট গণনার বিবরণীতে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে ৫৪৪ ভোট দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। বিবরণীতে দেখা যায়, আব্দুর রশিদ (মোরগ) ৪২১ ভোট, আফাজ উদ্দিন (ঘুড়ি) ৩৩৫ ভোট, রতন মিয়া (টিউবওয়েল) ৫৭ ভোট এবং সাবেক মেম্বার দুলাল মিয়া (ভ্যান গাড়ি) ২ ভোট পেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে পরাজিত মেম্বার প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিজয়ী প্রার্থী রফিকুল ইসলামের চাচাত ভাই আমিন কাজী প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে একই মাদ্রাসায় চাকরি করেন। ফলে এই সম্পর্ক এবং মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছে। এ জন্যই কেন্দ্রে ফল প্রকাশ করা হয়নি। আর প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অসুস্থ ছিলেন না। ফল পরিবর্তন করতেই তিনি অসুস্থতার ভান করেন। তারা বলেন, আমরা পুনঃনির্বাচন চাই না, কেবল ভোট পুনঃগণনা চাই।
এ ব্যাপারে প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে কথা বলার জন্য বার বার ফোন করলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তিনি ভোট পুনঃগণনার দাবিতে লিখিত আবেদনটি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আবেদনটি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেব। তবে ফলাফল গ্যাজেট হবার পর অভিযোগকারীগণ জেলার নির্বাচনী ট্রাইবুনালে মামলা করতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এসব কারসাজির প্রতিবাদ করায় বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থীর লোকজন অন্য মেম্বার প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেককেই আহত করে। এদের মধ্যে প্রার্থী রতন মিয়ার মা হালিমা বেগম (৫০), স্ত্রী ঝরণা (২৫), মজিবুর রহমানের স্ত্রী রেখা (২৫), সাফির উদ্দিনের ছেলে মানিক মিয়া (২২) ও শাহাবুদ্দিনের ছেলে আরিফকে (১৯) পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রার্থী রতন মিয়া বাদী হয়ে বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের নামে ৫ জুন পাকুন্দিয়া থানায় মামলা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে পরাজিত মেম্বার প্রার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো: আফাজ উদ্দিন। উপস্থিত অন্যরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।