কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় ১৯ হাজার ৮৭৮ জন হতদরিদ্র খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সঠিক তথ্য না দেওয়ায় তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন।
উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, উপজেলায় জনসংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৯। হতদরিদ্রের হার ১৭ শতাংশ। ওই অনুপাতে ২২ হাজার ৭৩৩ কার্ড বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিল, অথচ পাওয়া গেছে ২ হাজার ৮৫৫টি কার্ড।
প্রশাসনের লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে হতদরিদ্রদের বিষয়ে সঠিক তথ্য না দেয়ার অভিযোগ ওঠার পর উপকারভোগীদের কার্ডসংখ্যা পুনর্নির্ধারণ করতে সম্প্রতি উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের পরিচালক, ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।
নিকলী সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের বিমলা রানী বর্মণ, উষা রানী বর্মণ, হিরেন্দ্র বর্মণ, গৌরী বর্মণ, অনিতা রানী বর্মণ ও রিপন বর্মণ নামের কয়েকজন বলেন, তাঁরা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে কয়েকবার গেছেন। চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বলেছেন, বরাদ্দ কম আসায় কার্ড নেই। আসার সম্ভাবনাও অনিশ্চিত।
সঠিক তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কারপাশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাকি আমান খান বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন থেকে ১ হাজার ৩০০ হতদরিদ্রের তালিকা উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। পরে খাদ্যনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বলেন, আপনার ইউনিয়নের জন্য ৩১০টি কার্ড দেওয়া যাবে। এখন যাদের নামের তালিকা করেছিলাম, তারা বাদ যাওয়ায় প্রতিদিন তারা বাড়িতে এসে বলে, চেয়ারম্যান সাহেব, আমাদের নাম নিলেন, এখন নাম কই। তখন আর জবাব দিতে পারি না।’
এ বিষয়ে সদর ইউপির চেয়ারম্যান কারার বুরহান উদ্দিন বলেন, এ ইউনিয়নে হতদরিদ্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৪১৩। কার্ড পেয়েছি ৬৭০টি। সরকারিভাবে কার্ড কম দেওয়ার কারণে হতদরিদ্রদের খেসারত দিতে হচ্ছে।’
উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান ও সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, নিকলীর সিংপুর ইউনিয়নে মোট হতদরিদ্র ৩ হাজার ৬২৮ জন, কার্ড বরাদ্দ হয়েছে ৪৬০টি। দামপাড়ায় হতদরিদ্র ৩ হাজার ২২৭ জন, কার্ড হয়েছে ৪০০টি। কারপাশায় হতদরিদ্র ২ হাজার ৫৫৮ জন, কার্ড পেয়েছে ৩১০টি। জারুইতলায় হতদরিদ্র ৩ হাজার ৬৫৭ জন, কার্ড বরাদ্দ পেয়েছে ৫০০টি। গুরুইয়ে হতদরিদ্র ৭৬২ জন, কার্ড পেয়েছে ৩৪৫টি। ছাতিরচরে হতদরিদ্র ১ হাজার ৪৮৮ জন, কার্ড হয়েছে ১৭০টি। সদর ইউনিয়নে হতদরিদ্র ৫ হাজার ৪১৩ জন, কার্ড পেয়েছে ৬৭০টি।
উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রাশেদুল হাসান বলেন, জনসংখ্যার অনুপাতে আবার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ পেলে এ সংকট কাটবে।
সূত্র : ২০ হাজার হতদরিদ্র চাল পাচ্ছেন না (প্রথম আলো, ১৬ নভেম্বর ২০১৬)