গরমের স্বাস্থ্য সমস্যায় কিছু পরামর্শ

ডা. ডালিয়া নাসরীন লোপা ।।

 

হিট স্ট্রোক
অতিরিক্ত উষ্ণতায় (৪০ সে• ঊর্ধ্বে) এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতায় শরীরের ঘাম নিঃসরণ কমে যায়। ফলে শরীরের কোষ এবং কলা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হঠাৎ করে রোগী খুব দ্রুত অজ্ঞান হয়ে যায় এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেক ক্ষেত্রে রোগী মৃত্যুবরণ করে।

সারাদেশে এখন গ্রীষ্মের দাবদাহে জীবন ওষ্ঠাগত। প্রচণ্ড গরম তার ওপর বিদ্যুৎ বিভ্রাট এ যেন মড়ার ওপর খাড়ার ঘা। এই গরমে শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলেই প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। একটু সতর্ক হলেই অস্বাভাবিক এই স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে প্রতিহত করা যায়।

গরমে কি কি স্বাস্থ্য সমস্যা হয়
* ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা
* হিট স্ট্রোক
* ডায়রিয়া
* গ্যাস্ট্রিক সমস্যা
* হজমে গোলমাল
* গরমজনিত ঠাণ্ডাজ্বর
* সামার বয়েল বা র‌্যাশ

আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে আমাদের শরীর থেকে ঘাম নিঃসৃত হয় এবং এই ঘামের সাথে নিঃসৃত হয় সোডিয়াম ক্লোরাইড; যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গরমের দিনে এবং কঠিন পরিশ্রমে শরীর থেকে প্রায় ৩-৪ লিটার ঘাম নিঃসৃত হয়। সেই সাথে লবণ বেরিয়ে যায় ১.৫-২ গ্রাম। ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

হিট স্ট্রোক কি?
অতিরিক্ত উষ্ণতায় (৪০ সে• ঊর্ধ্বে) এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতায় শরীরের ঘাম নিঃসরণ কমে যায়। ফলে শরীরের কোষ এবং কলা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হঠাৎ করে রোগী খুব দ্রুত অজ্ঞান হয়ে যায় এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই রোগী মৃত্যুবরণ করে।
হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিপূর্ণ কারণ
* শারীরিক স্থূলতা।
* শরীর থেকে কম ঘাম নিঃসরণ হওয়া।
* বাতাস প্রবাহের স্বল্পতা।
* গরম আবহাওয়ায় অতিরিক্ত পরিশ্রম করা।
* অতিরিক্ত মদ্য পান।

ডায়রিয়া, হজমে সমস্যা, গায়ে লাল লাল র‌্যাশ বা ‘সামার বয়েল’ ওঠা ত্বকে ফোস্কা পড়া সাধারণত শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও সমানভাবে আক্রান্ত হয়।

করণীয়
এই গরমে পানি, তরলজাতীয় ও ঠাণ্ডা খাবার যেমন ডাব, লেবু সরবত, খাবার স্যালাইন, তরমুজ, ঠাণ্ডা দুধ এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন।

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দৈনিক ৪-৫ লিটার পানি পান করতে পারেন।

পানি শূন্যতা বা ‘ডিহাইড্রেশন’ রোধ করতে বার বার খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি স্বাভাবিক সব খাবার গ্রহণ করবেন।

‘হিট স্ট্রোক’ হলে বা রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়লে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন। যদি হাসপাতাল দূর হয় তবে তাৎক্ষণিক যা করবেন :
রোগীর গা থেকে পোশাক-পরিচ্ছদ যতদূর সম্ভব সরিয়ে ফেলুন। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে বার বার শরীর মুছিয়ে দিন, মাথা ধুয়ে দিন। উদ্দেশ্য শরীরের তাপমাত্রা কমানো। সাধারণত ভেজা কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখলে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। সতর্কতাঃ তাই বলে বরফ বা খুব ঠাণ্ডা পানিতে শরীর ডোবানো উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে, পাশাপাশি স্বাভাবিক সব খাবার খেতে হবে। পাতলা পায়খানা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

হজমে গোলমাল বা গ্যাস্ট্রিক থেকে বাঁচতে হলে তেলে ভাজা খাবার, বাইরের খাবার, অধিক ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।

পোশাকের ক্ষেত্রে হালকা সুতি ও আরামদায়ক কাপড় পরিধান করাই ভাল। ঘামে পোশাক ভিজে গেলে দ্রুত পাল্টে ফেলুন।

বার বার গোসল থেকে বিরত থাকুন নতুবা গরমজনিত ঠাণ্ডা বা জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন।

একটি কথা না বললেই নয়, প্রেসারের রোগীরা কিন্তু ওষুধ সময়মত খাবেন এবং সতর্ক থাকবেন। বেশি সময় চুলার পাশে বা রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকবেন না। গরমে সপ্তাহে প্রেসার চেকআপ করানো উচিত।

শিশুদের ক্ষেত্রে
* শিশুদের বেশি করে তরল খাবার খেতে দিন।
* বাচ্চাকে ‘ফ্যান’ বা ‘এসি’ যেখানেই রাখুন না কেন, একটিতে অভ্যস্ত করুন।
* ঠাণ্ডা তরলজাতীয় খাবার বেশি খেতে দিন।
* ঘামে ভেজা জামা দ্রুত পাল্টে ফেলুন।

বাচ্চার ডায়রিয়া বা বমি হলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালে নেয়ার আগ পর্যন্ত বাসাতেই ব্যবস্থা নিন। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, অল্প অল্প করে খাওয়াতে থাকুন। পাশাপাশি স্বাভাবিক সব খাবার খেতে দিন।

আপনার পরিবারের ক্ষুদ্রতম সদস্য থেকে বৃহত্তম সদস্য, যে কেউই এই গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এই হঠাৎ অসুস্থতাকে তাৎক্ষণিক প্রতিহত করতে কিন্তু আপনাকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। আর সেই মুহূর্তে ‘কি করণীয়’ এটি জানা থাকলে তো আপনি বেঁচে যেতে পারেন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে।

Similar Posts

error: Content is protected !!