মিঠামইনে দফায় দফায় সংঘর্ষ : নিহত ১

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনে দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে বল্লমের আঘাতে আনিস (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মিঠামইন থানার ওসি ও চার পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। সোমবার ৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা ঘাগড়া ইউনিয়নে খলাপাড়া গ্রামে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ দু’পক্ষকে নিবৃত্ত করতে সাত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লেও প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজ হয়নি।

স্থানীয়রা জানায়, ঘাগড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে এলাকার একটি পুকুরের পাড় নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। রোববার বিকেলে এই পুকুরের ভাঙা পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় বাচ্চু মিয়ার সমর্থক দুই ব্যক্তি আহত হন। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকে শান্ত করে।

এলাকাবাসী জানায়, সোমবার সকালে পুলিশ গিয়ে মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পুকুরের পাড়টি মেরামতের উদ্যোগ নেয়। পাড় মেরামত শেষ হতে না হতেই পুলিশের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে আরেক দফা কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এ সময় দু’পক্ষকে নিবৃত্ত করে পুলিশ ঘাগড়া বাজারের ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে অবস্থান নেয়।

এলাকার রতন কর জানান, কিছুক্ষণ পরই দু’পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চার-পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেও থামাতে পারেনি তাদের সংঘর্ষ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দেশী অস্ত্রশস্ত্র, ঢাল-তলোয়ার, বল্লম, কিরিচ নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ হয়। এভাবে দফায় দফায় দুই ঘণ্টা চলে সংঘর্ষ। এতে সাবেক চেয়ারম্যানের পক্ষের আনিস মিয়া (২৫) নামে এক ব্যক্তি বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত হয় অন্তত অর্ধশতাধিক।

সংঘর্ষে মুত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজন পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পরে পুলিশ দৌঁড়ে আত্মরক্ষা করে। এতে মিঠামইন থানার ওসি আলমগীর হোসেন, উপ-পরিদর্শক সিরাজসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতরা মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, মারামারি থামাতে গিয়ে তিনিসহ চারজন ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন। এক পুলিশ সদস্যকে মিঠামইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনিসহ অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ শর্টগানের সাত রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে। গুলি না করলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারত। ওসি বলেন, এ ঘটনায় এখন মামলার প্রস্তুতি চলছে। আর নিহত যুবকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মারামারি ও নিহতের ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মিয়ার মধ্যে এলাকার আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এসব নিয়ে মাঝে মাঝে এ দুই গ্রুপ সংঘাতে লিপ্ত হয়।

Similar Posts

error: Content is protected !!