ভাতের মাড়ের অকল্পনীয় উপকারিতা

আমাদের আশেপাশেই এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলোর উপকারিতার কথা আমরা চিন্তাও করতে পারিনা। এর মাঝে অন্যতম হচ্ছে ভাতের মাড়। কোন ধরনের সন্দেহের অবকাশ না রেখেই আমরা বলতে পারি এটা অবশ্যই আমাদের সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যের একটি গোপন রহস্য যা আমাদের অনেকেরই অজানা। বেশির ভাগ মানুষই হয়তো ভাত রান্নার করে মাড় ফেলে দেন বা রাইস কুকারে ভাত রান্না করেন। কিন্তু এই লেখাটি পড়ার পর সবাই ভাতের মাড় ফেলে দেয়ার আগে দু’বার চিন্তা করবেন। কারণ ভাতের মাড় সৌন্দর্যের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ যা ত্বকের ও চুলের জন্য খুবই ভালো।
কীভাবে ভাতের মাড় তৈরি করবেন?
ভালো মানের পরিস্কার চাল ধুয়ে খুব ভালো এবং পরিস্কার পানি দিয়ে ফুটাতে হবে। তারপর ভাত হয়ে গেলে অতিরিক্ত পানিটা একটি জগে নিয়ে ঠাণ্ডা করে ঢেকে ফ্রীজে রাখতে হবে। যখন এটা খুব ভালো করে ঠাণ্ডা হবে তখন এটা বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি।
কাপড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অর্থাৎ কাপড়কে মসৃণ ও নতুনের মতো করে তুলতে ভাতের মাড়ের ব্যবহার আমাদের সবারই জানা। এছাড়া এখানে কিছু উপকারিতা তুলে ধরছি যা ভাতের মাড় হতে পাওয়া সম্ভব।
ত্বকের জন্য ভালো-
পানিতে ভালো করে মুখ ধুয়ে ভাতের মাড়ের মাঝে তুলো ভিজিয়ে সমস্ত মুখে লাগাতে হবে টোনারের মতো। এটি ত্বককে ফর্সা করার মাধমে ত্বককে করে তুলে দীপ্তিময়। এটি ত্বকে ময়েশ্চেরাইজার এবং এন্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে এবং এতে অতিবেগুনী রশ্মি শোষণের ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের ত্বকের উপর তামার প্রলেপ পড়ার প্রবণতা রয়েছে আর ভাতের মাড় সেটা গঠন বাধা দেয় এবং ত্বকে হাইপার পিগমেন্টেশনে ও বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে।
চুলের জন্য অতুলনীয়-
শ্যাম্পু করার পরে চুলে ভাতের মাড় দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। চালের প্রোটিন চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করে চুলকে মজবুত করে নরম ও চকচকে করে।
ত্বকের জ্বালা ও প্রদাহে-
ভালো চালের তৈরি ভাতের মাড় দিয়ে দিনে ২ বার গোসল করলে ত্বকের বিরক্তিকর জ্বালা ও র্যাশ ভালো হয়ে যায়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা-
ভাতের মাড় খেলে স্বাস্থ্য সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকে। এতে ৮ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড রয়েছে যা দেহের কোষ এবং পেশীকে পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে। এতে থাকা উচ্চ শর্করা দেহকে কর্মচঞ্চল করে তোলে।
ব্রণ দূরীকরণে-
যাদের ত্বকে ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা মাতের মাড় তুলো দিয়ে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগালে তা অতি দ্রুত সেরে উঠে এবং ত্বকের লালচে ভাবও দূর করে।
চর্মরোগ প্রতিরোধে-
ত্বকের যেখানে চর্ম রোগ রয়েছে সেখানে ঠাণ্ডা ভাতের মাড় লাগাতে হবে। এভাবে নিয়মিত লাগালে লক্ষনীয় পরিবর্তন চোখে পড়বে। ভাতের মাড়ের শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ চর্মরোগ প্রতিরোধের জন্য খুবই কার্যকর।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে-
ডায়রিয়া হলে এক গ্লাস ভাতের মাড় নিয়ে তাতে এক চিমটি লবণ ভালো ভাবে মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত ও কার্যকরী ভাবে তা ডায়রিয়া নিরাময় করে।
এইসব উপকারিতাগুলোর সাথে সাথে দৈনিক প্রচুর পানি খেতে হবে এর কার্যকারিতাকে সাহায্য করার জন্য। এছাড়া এটা পানের ফলে সারাদিনের জন্য দেহ উৎফুল্ল ও কর্মমুখর থাকে। তাই পরবর্তীতে ভাতের মাড় ফেলে দেয়ার আগে এইসব উপকারিতা গুলোর কথা অবশ্যই মনে রাখবেন।

 

লেখক : শওকত আরা সাঈদা (লোপা)
জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ, এক্স ডায়েটিশিয়ান,পারসোনা হেল্থ
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান (স্নাতকোত্তর) (এমপিএইচ)
তথ্য সূত্রঃ টাইমসফুল

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!