ভৈরবে গানের আসরে বসা নিয়ে তুলকালাম

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুইদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মির্জা মো. সুলায়মানসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশত লোক আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশ প্রায় অর্ধশত রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে।

আহতদের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে বিকেলে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা আহমেদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে সংঘর্ষ থামে। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান এলাকা পরিদর্শন করেন। বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশসহ র‌্যাব সদস্যরা মোতায়েন আছেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, শনিবার (৩ মার্চ) রাতে ভৈরব পৌর শহরের দক্ষিণ কালিপুর এলাকায় বাউল গানের আসর হয়। মস্তু ফকির নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ওই গানের আসরে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে কালিপুরের যুবকদের সঙ্গে পলতাকান্দা গ্রামের যুবকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর উভয় গ্রামের মুরুব্বিরা তাৎক্ষণিক আলোচনা করে রোববার বিকালে মীমাংসার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মস্তু ফকিরের ভাগ্নে কালিপুর গ্রামের মুছা (৪০) মিয়া নামের এক ব্যক্তি ভৈরব বাজার যেতে পলতাকান্দা ব্রিজের কাছে এলে তাঁকে ধরে মারধর করেন পলতাকান্দা এলাকার যুবকরা। এ খবর কালিপুর গ্রামে পৌঁছালে কয়েকশ গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে দুপুর দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায় পলতাকান্দা গ্রামে। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।

খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মির্জা মো. সুলায়মান সংঘর্ষ থামাতে কালিপুর গ্রামে আসেন। এ সময় তাঁকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ে মারলে তিনি আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি ফিরে এলে পলতাকান্দা এলাকাসহ তাঁর নিজগ্রাম দক্ষিণ চন্ডিবের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় নারী-পুরুষসহ কয়েকশ লোক দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে একে অন্যের ওপর ঝাপিয়ে পড়েন। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশত লোক আহত হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় অর্ধশত রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলেও সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হয়। পরে র‌্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্পের একটি দল পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভৈরবের ইউএনও দিলরুবা আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তাঁরা প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত করে শাস্তির আশ্বাস দিয়ে সংঘর্ষ পরিত্যাগের আহ্বান জানান। তাঁদের সেই আশ্বাসে পরে উভয়পক্ষ সংঘর্ষ থেকে সরে যান।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় অর্ধশত রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উভয় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ র‌্যাবের টহল থাকবে।

পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি উভয় গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

সূত্র : গানের আসরে চেয়ারে বসা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড  [এনটিভি অনলাইন, ৪ মার্চ ২০১৮]

Similar Posts

error: Content is protected !!