আকারে-প্রকারে মোটেও হাতির মতো প্রকাণ্ড নয়; ছোটখাটো গড়ন। তবে হাতির সঙ্গে তার নামটি জড়িয়ে আছে পুষ্পদণ্ডের কারণে। লম্বা পুষ্পদণ্ডটি হাতির শুঁড়ের মতো। সে কারণেই গাছটির নাম হয়েছে হাতিশুঁড়।
এমন কিছু কুলীন গোত্রের নয়। পথের পাশে, ইটখোলার আশপাশে, পতিত ভিটায় যত্নআত্তি ছাড়াই জন্মায়। দিনে দিনে ঘন ঝোপের মতো হয়ে ওঠে হাতিশুঁড় নামের এই গুল্মটি। এটি বর্ষজীবী। কাণ্ড নরম ও ভেতরে ফাঁপা। উচ্চতা এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
উদ্ভিদবিজ্ঞানী নওয়াজেশ আহমেদ তাঁর বাংলার বনফুল বইতে গুল্মটির আরও বেশ কয়েকটি নাম, যেমন ‘মহাশুণ্ডী’, ‘হস্তিশুণ্ডী’, ‘ধূসরপত্রিকা’ ইত্যাদি উল্লেখ করেছেন। ধূসরপত্রিকা নাম কেন হয়েছে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি। এর পাতা ধূসর তো নয়ই বরং গাঢ় সবুজ। পাতা হৃদয়াকৃতির, খসখসে। হাতে নিয়ে কচলালে কটু গন্ধ পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium Indicum. পশ্চিম ভারতীয় দীপপুঞ্জ এর আদিনিবাস। তবে সারা ভারতবর্ষেই এটি জন্মে।
হাতিশুঁড়ের ফুল বেশ চমৎকার। পাতার ওপরে লম্বা পুষ্পদণ্ডগুলো হাতির বাঁকা শুঁড়ের মতো মাথা তুলে থাকে। এই পুষ্পদণ্ডের উভয় পাশ দিয়ে ফোটে সাদা ও হালকা বেগুনি রং মেশানো অজস্র ছোট ছোট ফুল। ফুলের পাপড়ি পাঁচটি। সারা বছরই ফুল ফোটে তবে বর্ষার শেষে প্রস্ফুটন সবচেয়ে বেশি। তখন ঘন সবুজ পাতার ওপরে সাদা বেগুনি ফুলে ফুলে ভরে ওঠা হাতিশুঁড়ের ঝোপ দৃষ্টি কাড়ে।
উদ্যান রচনায় হাতিশুঁড়ের কদর নেই, তার মূল্য ভেষজ চিকিৎসকদের কাছে। এটি একটি মূল্যবান ঔষধি উদ্ভিদ। সে কারণে ইদানীং জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে এর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বলে নওয়াজেশ আহমেদ তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন। দেশের একটি প্রাচীন ইউনানী চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন হাকিম জানালেন, অধুনা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে এর গাছে ও পাতায় পাইরোলিজিডিন, অ্যালকালয়েডস, ইনডিসিন, হেলিওট্রিন ও শেকড়ে এসট্রাডিওলসহ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে, যা চক্ষু চিকিৎসা ও চর্মরোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে কাজ করে। এ ছাড়া প্রচলিত ভেষজ চিকিৎসায় বহুকাল থেকে হাতিশুঁড়ের ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন ওষুধের উপাদান হিসেবে হাতিশুঁড়ের নানা অংশ ব্যবহৃত হয়। কাজেই চলতি পথে হাতিশুঁড়ের দেখা পেলে তুচ্ছ জ্ঞানে তাকে পায়ে মাড়িয়ে না যাওয়াই হবে উত্তম।
সূত্র : ইন্টারনেট