মো: আল আমিন ।।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ‘বন্যা ও জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প’ নামে ভাসমান সবজি বাগান চালু করেছে। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ কলাপাড়া কৃষি ব্লকের কাসরারচর বিলে গিয়ে ভাসমান সবজি বাগানের এক অভাবনীয় মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে ৫০টির মতো ভাসমান সবজির বাগান দেখা গেছে।
এসব বাগানে লালশাক, পুঁইশাক ও কলমিশাক, পাটশাক, লাউশাক, ঢেঁড়স, মুলা, ডাঁটাসহ বিভিন্ন জাতের শাকসবজির আবাদ করা হয়েছে। এসব ভাসমান বাগান থেকে চাষিরা ইতোমধ্যে শাকসবজি আহরণ শুরু করেছেন। পার্শ্ববর্তী চংশোলাকিয়া এলাকার কৃষক ফয়েজউদ্দিন, রাজ্জাকসহ বেশ ক’জন চাষিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে এসব বাগান গড়ে তোলা হয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, উপজেলার মহিনন্দ এলাকায় দু’টি এবং মারিয়া এলাকায় একটি জলাশয়কে কেন্দ্র করে ভাসমান সবজির আবাদ করা হচ্ছে। পচা কচুরিপানা জড়ো করে এসব ভাসমান বাগান বা বেড তৈরি করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট, প্রস্থ ৪ ফুট এবং উচ্চতাও ৪ ফুট। এসব বাগানে পালংশাকসহ শীতকালীন শাকসবজিরও আবাদ করা যায়। শাকসবজির পাশাপাশি মসলাজাতীয় ফসলও আবাদ করা যায়। কোনো রকম সার প্রয়োগ ছাড়াই এসব ভাসমান বাগানে শাকসবজির আবাদ করা হয়। ফলে ভাসমান বাগানের শাকসবজি বেশ সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। আর বিলের পনি যখন শুকিয়ে যাবে, তখন এসব বেড অন্যান্য জমির জন্য জৈবসার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ফলে এ রকম ভাসমান বাগানের উপকার বহুমুখী।
সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বর্ষার শুরুতে এসব বেড তৈরি করা হয়। যেসব এলাকায় পর্যাপ্ত কচুরিপানা পাওয়া যায় না, সেখানে অন্যান্য আগাছা বা লতাপাতা স্তূপ করে রেখে দিলে বর্ষার পানি আসার সাথে সাথে এসব স্তূপই ভাসমান সবজি বেড হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসক জি এস এম জাফরউল্লাহ খামারবাড়ির উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামকে নিয়ে কাসরারচর বিলের ভাসমান সবজি বাগান পরিদর্শন করেন। তিনি সবজিচাষিদের প্রশংসা করেন এবং তাদেরকে উৎসাহিত করেন।
উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, জেলার ছয়টি উপজেলা করিমগঞ্জ, সদর, কটিয়াদী, বাজিতপুর, ইটনা ও মিঠামইনে ভাসমান সবজি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভাসমান বাগানের সবজি খুব দ্রুত বাড়ে। অল্প দিনের মধ্যেই এসব শাকসবজি আহরণ করে বাজারজাত করা যায়। এসব শাকসবজি দেখতে বেশ তরতাজা ও আকর্ষণীয় হয় বলে ক্রেতারাও আকৃষ্ট হন। ফলে ভাসমান সবজি বাগান করে কৃষকেরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হতে পারেন।
লেখক : সাংবাদিক