নদীপথে ডাকাতি বেড়েই চলেছে

বিশেষ সংবাদদাতা ।।
মেঘনা, ঘোড়াউত্রা ও কালী নদী। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে গুরুত্ব অনেক। সুনামগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে সহজতর রুট এটি। যাত্রী বহন থেকে শুরু করে ভারী মালামাল বহনের একমাত্র রুট। এক সময় নিকলী থেকে বাজিতপুর, কুলিয়ারচর হয়ে ভৈরব যাতায়াতের জন্যও ব্যবহার হতো এই নদীপথ। খনন না হওয়ায় পলি জমে ঘোড়াউত্রার শাখানদীগুলোর নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে, বিধায় নিকলী-ভৈরব নদীপথে যাতায়াত এখন প্রায় বন্ধ। চালু আছে কেবল সীমিত আকারে ব্যবসায়িক মালামাল বহনের কাজ।
নদীপথে যাত্রী ও মালামাল বহনে স্বল্পখরচ হওয়ায় সুনামগঞ্জ থেকে নিকলী, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, ভৈরব হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকে। যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাবে এখন এই রুট ব্যবহারে অনেকেই অনীহা দেখাচ্ছে। জানা যায়, প্রায়ই চলাচলকারী যানবাহনে ডাকাতদলের হামলা ও সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। এই হামলার শিকার হয়েছেন সাধারণ যাত্রী, স্থানীয় ও অন্যান্য ব্যবসায়ী, বিয়ের যানবাহন, এমনকি ঘুরতে আসা পর্যটকরাও।
ভুক্তভোগী অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে দিন-রাতে শতাধিক ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। নিয়মিত পুলিশ প্রহরা থাকার পরও ডাকাতি বন্ধ হচ্ছে না।

ভুক্তভোগী মাছ ব্যবসায়ীর বক্তব্য
ভুক্তভোগী নিকলীর একজন মাছ ব্যবসায়ী এই প্রতিনিধিকে ফোনে জানান, ৩১ অক্টোবর শনিবার অন্য দিনের মতো কুলিয়ারচর আড়তে বিক্রির জন্য মাছভর্তি ট্রলার পাঠাই। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা নাগাদ রাজাপুর-কামারবালি-মাইজচর এলাকায় একদল ডাকাত পিস্তলসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে আমার ট্রলারে হামলা চালায়। এ সময় নৌকায় মাঝিসহ ৩জন ছিল। তাদের মারধর করে মাছভর্তি নৌকা নিয়ে চলে যায়। পরে রাত ১২টার দিকে তাদের হাত-পা বাধা অবস্থায় নদীর পাড়ে ফেলে রাখে। এ সময় নৌকাও ফেরত দিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে। ট্রলারে থাকা মাছের মূল্যমান প্রায় আড়াই লাখ টাকা। ঘটনার পর বাজিতপুর থানায় যোগাযোগ করা হলে থানা থেকে তৎক্ষণাৎ জানানো হয় কুলিয়ারচর ও ভৈরব সার্কেলে। জড়িতদের খুঁজে বের করতে সোর্স নামানো হয়েছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, এই ঘটনার কিছুদিন আগেও ডাকাতরা নিকলীর মোহরকোনার কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সাথে থাকা মালামালসহ নগদ টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে। সিংপুরের আরেক মাছ ব্যবসায়ীর লোকজনের ওপর হামলা চালালে তারা নৌকা থেকে নেমে দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পান।

বর্ষাকালে অভিনব চাঁদাবাজি
বর্ষাকালে নদীর পানি ও হাওরের পানি মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। তখন নদীপথ বোঝার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় নদীতীরে স্থাপন করা আড়কাঠি (স্থানীয়ভাবে পরিচিত) ও ভাসমান বয়া। ঘোড়াউত্রা নদীর তীরঘেঁষে বেশকিছু বয়া ছিল, যা এখন সব প্রায় চুরি হয়ে গেছে। তীরে স্থাপন করা আড়কাঠিগুলো ভরা বর্ষায় কিছু দুষ্কৃতকারী উঠিয়ে ফেলে। তখন এই রুটে চলাচলকারী মালবাহী বড় কার্গোগুলো পথ হারিয়ে অগভীর চড়ে আটকে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুর্বৃত্তরা চড় থেকে ছাড়িয়ে দেয়ার জন্য কার্গোর সাথে মোটা অংকের চুক্তি করে। কখনো কখনো ডাকাতির ঘটনাও ঘটে থাকে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!