সামাজিক অবক্ষয় রোধে সবাই একসাথে কাজ করতে হবে

নিকলী গোড়াচাঁদ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক। আলো ছড়িয়েছেন নিকলীর অগণিত শিক্ষার্থীর মাঝে। তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল জব্বার। শিক্ষা ও সমাজ নিয়ে আমাদের নিকলী.কম-এর সাথে খোলামেলা কথা বলেন এই গুণীজন। পাঠকদের জন্য বিস্তারিত প্রকাশ করা হলো।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল আহছানআবদুল্লাহ আল মহসিন

abdul_jabbar_sir
আমাদের নিকলী.কম। নিকলীভিত্তিক প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম; যার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য নিকলীর চলমান ঘটনা ও নিকলীর ইতিবাচক দিকগুলোর প্রচারণা। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য।
খুব ভালো উদ্যোগ। আমি এর কার্যক্রমে পূর্ণ সমর্থন জানাই। এ ধরনের আঞ্চলিক প্রকাশনা সবার মাঝে তথ্য সরবরাহে ভালো ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।

 

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন।
এ সময়ের সামাজিক অবস্থা খুবই খারাপ। সমাজে অবক্ষয় শুরু হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের পথ আমরাও খুঁজে পাচ্ছি না। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারে, মিডিয়া ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। সবাই এগিয়ে আসলে আশা করা যায় এর একটা ইতিবাচক ছাপ সমাজে পড়বে।

 

নিকলী জিসি পাইলট স্কুলে দীর্ঘ সময় শিক্ষকতার মাধ্যমে এলাকার তরুণ সমাজকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। আপনার সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন কিভাবে করবেন?
দুই সময়ের পার্থক্য অনেক। এবং এ পার্থক্য দূর করার মতো কোনো সামাজিক অবস্থা এখন নেই। সারা দেশেই শিক্ষা ব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনা বেড়ে গেছে। সামাজিক দায়িত্ববোধের ক্ষেত্রে আমরা অনেক অলস হয়ে পড়েছি। যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান ধরে রাখতে হলে শিক্ষক নিয়োগে অনেক দায়িত্বশীল হতে হয়। সর্ব ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা একেবারেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। শিক্ষকগণ এবং প্রতিষ্ঠান যারা পরিচালনায় আছেন, তাদের অনেক বিচক্ষণ হতে হবে।
দিন দিন স্কুলকেন্দ্রিক পড়ালেখা অনেক সংকুচিত হয়ে আসছে। নিকলী জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে উচ্চতর গণিতের মতো একটি কঠিন বিষয়ের পাঠদান করছেন একজন পার্টটাইম শিক্ষক! এই স্কুলে পিএসসি, জেএসসি ও কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় ক্লাস সংখ্যাও কমে গেছে।

 

নিকলী জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি আবাসিক ব্যবস্থাপনা ছিল। দীর্ঘদিন যাবত এটি বন্ধ আছে। এটি পুনরায় শুরু করার প্রয়োজন আছে কি?
আবাসন ব্যবস্থা তখনই প্রয়োজন হয়, যখন দূর থেকে কোনো শিক্ষার্থী এসে স্কুলে ভর্তি হয়। আমরা জানি, যেসব এলাকার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসতো, এখন প্রায় সব জায়গায়ই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হয়ে গেছে। তাই আমি মনে করি, আবাসিক হোস্টেলের এখন আর দরকার হবে না।

 

এক সময় এ অঞ্চলে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অনেক চর্চা হতো। এ থেকে অনেক মেধাবী বের হয়ে আসতো। সম্প্রতি সময়ে এর শূন্যতা দেখা যাচ্ছে।
সামাজিকভাবে আমরা এতটা সচেতন নই। আমাদের সময় স্কুলকেন্দ্রিক খেলাধুলা, সাহিত্য চর্চা, আবৃত্তি, নাটক, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদির প্রচলন ছিল। এগুলো যদি নতুন করে আবার চালু করা যায় তাহলে একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আসতে পারে।

 

প্রায় সব উপজেলাতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গবেষণা বা রেফারেন্সের জন্য মানসম্পন্ন লাইব্রেরি আছে। অতীতে আপনাদের অনেক প্রচেষ্টার কথা শোনা যায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ উপজেলায় কোনো ভালোমানের পাবলিক লাইব্রেরি গড়ে উঠেনি।
নিকলীতে একটি পাবলিক লাইব্রেরি আছে। আমাকে এক সময় এর ‘বাই ল’ তৈরি করার দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল। তৈরি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু শর্ত উদ্যোক্তাদের কারো কারো পছন্দ না হওয়ায় আমাকেও আর ডাকা হয়নি। কার্যক্রমও আর এগোয়নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সভায় আমি বক্তব্য রেখেছি, কেন নিকলী পাবলিক লাইব্রেরি চালু রাখা হয় না? প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃত্বদানকারীদের এগিয়ে আসলেই কেবল সম্ভব এটি বাস্তবায়ন করা।

 

সমাজের বিভিন্ন স্তরে মাদকের ব্যাপক ছড়াছড়ি। এ থেকে মুক্তির পথ কি?
এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সামাজিকভাবে সচেতন হওয়া, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং প্রশাসন কঠোর হস্তে দমন অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিছুদিন আগেও কয়েকজন মাদকসেবি ও মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে আবার ছাড়া পেয়ে যায়। এমন না হয়ে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলেও অনেকাংশে এই মারণ ছোবল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।

 

নিকলী খেলাধুলায় বরাবরই ভালো ফল করতো। বিশেষ করে ফুটবলে। এখন উল্লেখ করার মতো কোনো খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না কেন?
এজন্য দরকার স্কুল পর্যায় থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খেলোয়াড়দের লালন করা। বর্তমান সময়ে এই দুই ক্ষেত্রেই বেশ ঘাটতি রয়েছে। উদ্যমী ভালো সংগঠক নেই; তরুণরা নানান অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। জীবনমান অতি কমার্শিয়াল হয়ে যাওয়ায় অনেকে মাঠে আসছে না।

 

নিকলী জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন করে মেয়েদের শাখা চালু করা হয়েছে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
পাশাপাশি স্থানে যেহেতু ছেলে ও মেয়েদের আলাদা পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে, তাই এর তেমন দরকার ছিল না। সামাজিক ও আঞ্চলিকভাবে আমরা এই ব্যবস্থাপনায় অভ্যস্ত নই। মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় আরো সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শহীদ সরণিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজিয়েট স্কুলে উন্নীত করা প্রয়োজন। সর্বোপরি একই সাথে যদি চলতেই হয়, এজন্য এডমিনিস্ট্রেশন শক্তহাতে পরিচালনা খুবই জরুরি।

 

নিকলী গোড়াচাঁদ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হিসেবে এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
আশা তো অনেক করি। তোমাদের জন্য একটাই কথা, চেষ্টা করো ভালো কিছু শেখার।

 

কষ্ট করে আমাদের নিকলী.কম’কে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমাদের নিকলী ডটকম’কেও অনেক ধন্যবাদ। দীর্ঘদিন যাবত আমার মনে যে কথাগুলো পুষছিলাম; এর ফলে সবার মাঝে শেয়ার করতে পেরে আমারও ভালো লাগছে।

নিজ বাড়িতে সস্ত্রীক মোহাম্মদ আবদুল জব্বার স্যার
নিজ বাড়িতে সস্ত্রীক মোহাম্মদ আবদুল জব্বার স্যার

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!